ভারতীয় সংগ্রহশালার ঠিকানা তখনও এশিয়াটিক সোসাইটির ভবন, চৌরঙ্গির উপর চোখধাঁধানো নতুন বাড়ি সবে মাথা তুলেছে ওয়াল্টার গ্র্যানভিলের নকশায়, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। ১৮৭৪ সাল। বন্ধু ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্রকে সোসাইটির মিউজিয়াম দেখাতে নিয়ে এসেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পায়ে তালতলার চটি, তাই রক্ষী ঢুকতে দিল না তাঁকে। তাই নিয়ে সে কালে কম হইচই হয়নি। কিন্তু এর মাত্র দশ বছর পর নতুন বাড়িতে নির্বিবাদে মিউজিয়াম দেখে এলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। তার পর এসেছেন কত মানুষ। ১৮১৪-য় এশিয়াটিক সোসাইটির পুরনো বাড়িতে সংগ্রহশালার সূচনা, ১৮৭৮-এ নিজস্ব ভবনে প্রত্নতত্ত্ব সহ কয়েকটি গ্যালারি সাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত হল। পরবর্তী ১৩৫ বছরের ইতিহাস নিঃসন্দেহে বর্ণময়। এশিয়ার সব থেকে পুরনো এই সংগ্রহের ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র এখনও ঈর্ষণীয়। ১৯৩০ ও ১৯৪৯-এ দু’বার সংগ্রহ দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু প্রবল প্রতিবাদে তা সম্ভব হয়নি। এখনও বাইরে থেকে যাঁরা কলকাতায় আসেন, তাঁদের অন্যতম অবশ্য-দ্রষ্টব্য এই সংগ্রহশালা। |
দুশো বছর উদ্যাপনে খোলনলচে বদলের চেষ্টা চলছে সংগ্রহশালায়। বহিরঙ্গে নবায়ন হয়েছে, ভিতরের গ্যালারির সংস্কারের কাজ চলছে। গান্ধারশিল্প, প্রত্নতত্ত্ব, মানবজাতির ক্রমবিকাশ, অলংকরণশিল্প ও বস্ত্রশিল্প, মুদ্রা-র নতুন গ্যালারিগুলি ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা দিবসের সকালেই এক বিশেষ অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, থাকছেন রাজ্যপাল কে আর নারায়ণন, জানালেন সংগ্রহশালার অধিকর্তা বি বেণুগোপাল। সে দিনই প্রকাশিত হবে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ফার্স্ট ডে কভার ও বিশেষ ডাকটিকিট। তৈরি হচ্ছে কাফেটেরিয়া ও সুভেনির শপ। আর সে দিন বিকেল সাড়ে চারটেয় আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণ দেবেন প্রবীণ ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, বিষয় ‘মিউজিয়াম: থট্স অন ইট্স পাস্ট অ্যান্ড ফিউচার’। সংগ্রহশালা সাধারণের জন্য খোলা হবে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে। দুশো বছর উপলক্ষে সারা বছর ধরেই আছে নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। সঙ্গের ছবিটি ১৯৫২ সালে তোলা। |