অসুস্থ ছেলের সঠিক চিকিৎসার দরকার। তাই পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই কয়েক জন প্রতিবেশীকে নিয়ে কোনও ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছিলেন বছর ষাটেকের ষষ্ঠীবর রায়চৌধুরী। কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তিও করেছিলেন ছেলেকে। শনিবার রাতে ছেলের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সেই খবর পৌঁছয়নি বাবার কাছে। তার আগেই তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছেলের মৃতদেহ আপাতত হাসপাতালের মর্গে। পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশ দূতাবাসে খবর দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে বাইপাস-সংলগ্ন একটি হাসপাতালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত ছেলেকে ভর্তি করেন ষষ্ঠীবরবাবু। ছেলেকে ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়ার পরে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ঠিকানার কথা জানিয়ে ফেলেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট-ভিসা দেখতে চাইলে জানা যায়, সে সব কিছুই নেই তাঁদের কাছে। এর পরেই হাসপাতালের তরফে খবর দেওয়া হয় পূর্ব যাদবপুর থানায়। অনুপ্রবেশের অভিযোগে ষষ্ঠীবর রায়চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধরা পড়েন মিঠুন চক্রবর্তী নামে বছর চব্বিশের এক যুবক। তাঁদের সঙ্গে এ দেশে আসা সুমিত্রা চক্রবর্তী নামে বছর চল্লিশের এক মহিলার খোঁজ পায়নি পুলিশ।
জেরায় ষষ্ঠীবরবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কালারোয়া থানার জয়নগরের খড়দোব্যাঁটরা গ্রামে। তিনি পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। মিঠুনরা থাকেন যশোহরের মণিরামপুর এলাকায়। ষষ্ঠীবাবুর ছেলে প্রশান্ত (২১) দীর্ঘ দিন ধরেই হার্টের অসুখে ভুগছিলেন। বাংলাদেশে চিকিৎসা করিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। শুনেছিলেন, কলকাতায় ভাল চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে। সেই কারণেই ছেলের ভালো চিকিৎসার জন্য সীমান্ত পার হয়ে এ দেশে ঢোকেন। শনিবার দুপুরের দিকে সড়কপথে বিরাটির কাছে পৌঁছন তাঁরা। তখনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রশান্ত। দমদম এলাকার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে ওই যুবককে কলকাতার বড় কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ই এম বাইপাস-সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ছেলেকে ওয়ার্ডে পাঠানোর পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর পরিজনদের নাম-ঠিকানা জানতে চান। জেরায় ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের কোনও ঠিকানা হাসপাতালে জানানো হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ছেলে আচমকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায়
ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ষষ্ঠীবাবু। সে কারণে বাংলাদেশের ঠিকানাই বলে
ফেলেন তিনি।
পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরেই হাসপাতালে প্রশান্তের মৃত্যু হয়। তবে সে খবর রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ষষ্ঠীবাবুদের কাছে পৌঁছয়নি। রবিবারই আলিপুর আদালতে ষষ্ঠীবরবাবু এবং মিঠুনকে পেশ করা হলে আদালত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রশান্তর হার্টে গুরুতর সমস্যা ছিল। তার উপরে এতটা পথ যাতায়াতের ধকল সহ্য করতে পারেননি তিনি। হাসপাতালে যখন আনা হয়, তখনই তাঁর প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। হাসপাতালে পৌঁছনোর কিছুক্ষণ পরেই তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। তার পরেই তিনি মারা যান। |