|
|
|
|
শর্ত দিতে কি সবাই পারে |
সুচিত্রা সেন-এর মতো দাপিয়ে নিজের অনুশাসন নিজেই তৈরি করতে
পারবেন কি আজকের নায়িকারা? উত্তর খুঁজলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত। |
সুচিত্রা সেন কি ভারতের প্রথম ফেমিনিস্ট নায়িকা ছিলেন?
তা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। কেউ বলতে পারেন যে, তিনি সত্যিই নিজের শর্তে কাজ করে গিয়েছেন। কেউ বলতে পারেন যে, তিনি শর্ত রেখেছিলেন ঠিকই, তবে তা পুরুষতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য নয়। বরং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এক জননীর নিজস্ব জায়গা করে নেওয়ার খাতিরেই সেই শর্তগুলো রাখা হত। হয়তো নিজস্ব ‘ফেমিনিটি’ রক্ষা করার জন্য একটা অন্য ‘স্পেস’ তৈরি করার চেষ্টা। তবে যে কোনও কারণেই হোক না কেন, সে যুগে সুচিত্রা সেন-য়ের কাজ করার শর্তগুলো ছিল চোখে পড়ার মতো। তখনকার দিনে মেয়েদের কোনও আলাদা মেক-আপ রুম ছিল না। স্রেফ নিজের দাবিতে তিনি নিজের জন্য আলাদা মেক-আপ রুম আদায় করে নিয়েছিলেন। কাজ করতেন দর্পের সঙ্গে। শোনা যায় যে কেরিয়ারের প্রথম দিকে যখন স্টুডিয়ো সিস্টেমে কাজ করা হত, তখন সুচিত্রা সেন নাকি উত্তমকুমারের থেকে বেশি মাইনে নিতেন। “শুনেছি পঞ্চাশের দশকের শুরুতে এমপি স্টুডিয়োতে কাজ করার সময় সুচিত্রা সেনের মাসিক মাইনে ছিল ২৫০০ টাকা। আর উত্তম কুমার পেতেন ২০০০ টাকা। সেটা ছিল ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমা করার সময়,” বলছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।
|
|
আর যখন নিজের কেরিয়ার শেষ করলেন, তখনও নিজের শর্তে। নায়িকা হিসেবেই। সিরিয়াল বা যাত্রা-র মা-মাসিমা, কিংবা নাতনি রাইমা-রিয়া-র দিদিমা রূপে কোনও দিন পর্দায় দেখা দেননি তিনি। তাঁর শেষ ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৮-এ। তার পর কেটেছে দীর্ঘ ৩৬ বছর। দিন পাল্টেছে। ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলেছে। টলিউডের নায়িকাদের নিজস্ব মেক-আপ ভ্যান আজ সব্বারই থাকে। কিন্তু অন্য শর্তগুলো? আজকের নায়িকারা কী ভাবেন তা নিয়ে?
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের দেখা হয়েছিল ‘দেবী চৌধুরানী’র জন্য। প্রথমে নাকি এই ছবির কথা শুনে উৎসাহিত হয়েছিলেন মহানায়িকা। রাজিও হয়েছিলেন। গোলযোগ শুরু হয় ডেট নিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের সব সিনেমার নিয়ম ছিল, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ‘ফিক্সড ডেট’ দিতে হবে। কিন্তু সেই সময় সুচিত্রা সেন ব্যস্ত অভিনেত্রী, আর তাঁর পক্ষে তিন মাস ‘এক্সক্লুসিভলি’ এই ছবির জন্য সময় দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই ছবিটি করেননি তিনি। |
|
|
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত |
আমি নিজেও ‘এক্সক্লুসিভিটি ক্লজে’ বিশ্বাসী নই। কাজ করার আমার একটা নিজস্ব স্টাইল রয়েছে। নতুন ট্যালেন্টদের সুযোগ দেওয়াটা আমি পছন্দ করি। আমি অপর্ণা সেনের ‘পারমিতার একদিন’ করার সময় ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ও করেছিলাম। ২০১৪-তে যদি আমির খান, ফারহান আখতার বা শাহরুখ খান বলেন, ‘এক্সক্লুসিভিটি ক্লজ’ দিয়ে সিনেমা করতে? বা বিশাল ভরদ্বাজ, অনুরাগ কশ্যপ, কিংবা সঞ্জয় লীলা বনশালী?
করব। যদি দেখি অভিনেত্রী হিসেবে আমি আরও ভাল জায়গায় পৌঁছতে পারব, তা হলে নিশ্চয়ই আমার অন্যান্য পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলব। অভিনেত্রী হিসেবে আমার সে জায়গাটা আছে, যেখান থেকে আমি পরিচালকদের সঙ্গে এই নেগোসিয়েশনটা করতে পারি। আমার ধারণা, তাঁরা আমার যুক্তি এবং কারণগুলো বুঝবেন।
• লিও টলস্টয়ের ‘রেজারেকশন’ নিয়ে একটা সিনেমা বানানোর কথা ঋত্বিক ঘটক ভেবেছিলেন। তাতে সুচিত্রা সেনকে নেওয়ার কথা হয়েছিল। ছবিটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। এমনও শোনা যায় যে, ঋত্বিক-এর ‘রঙের গোলাম’য়ে সুচিত্রা সেনের অভিনয় করার কথা ছিল। “ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি যে সুচিত্রা সেনকে তিনি বেশ স্নেহ করতেন। রমা বলে ডাকতেন ওঁকে। ‘রেজারেকশন’য়ে ওঁকে নিয়ে কাজ করবেন ভেবেছিলেন। সম্প্রতি শুনলাম যে, ‘রঙের গোলাম’য়ে সুচিত্রা সেন নাকি আপত্তি করেছিলেন নতুন চিত্রগ্রাহকের সঙ্গে কাজ করতে। তাই ছবিটা হয়নি। এটা যে একেবারেই অপ্রত্যাশিত তা নয়। এর আগে তিনি অজয় করের মতো চিত্রগ্রাহকের সঙ্গে কাজ করে এসেছেন। তাই কোনও ‘স্টিল ফোটোগ্রাফার’কে নিয়ে তাঁর সিনেমাতে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করার বিষয়ে আপত্তি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়,” বলছেন সঞ্জয়। |
|
|
কোয়েল মল্লিক |
আমি কখনও কাউকে জাজ করা পছন্দ করি না। ওঁর সিদ্ধান্তটা ওঁর ব্যক্তিগত পছন্দের জায়গা। তাকে আমি সম্মান করি। তবে এটুকু বলতে পারি আমার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রিজার্ভেশন থাকে কী রকম দৃশ্যে শ্যুট করব, কী রকম পোশাক পরব। আমার মতামতগুলো আমি খুবই আন্তরিক ভাবে বলে দিই। আবার উল্টো দিকের মতটাও শুনি।
যদি কোনও একজন ভাল পরিচালকের ছবিতে কাজ করার শর্ত হয় যে সেখানে একজন স্টিল ফোটোগ্রাফারকে দিয়ে প্রথমবার চিত্রগ্রাহকের কাজ করানো হবে, তা হলে কি আপনি সেটাতে অভিনয় করতে রাজি হবেন?
যদি তাঁর মেধা আর জ্ঞান সম্বন্ধে আমার আত্মবিশ্বাস থাকে, তা হলে তা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। সবারই জীবনে সব কিছুর একটা ‘প্রথম’ থাকে। সুযোগ না পেলে আমিও তো কোনও দিন সিনেমা করতে পারতাম না। সেই ফোটোগ্রাফারের ক্ষমতা বা দক্ষতা নিয়ে যদি আমার কোনও দ্বিধা না থাকে, আমি সেই ছবিতে কাজ করতে অবশ্যই রাজি থাকব।
• উত্তমকুমারের সঙ্গে সিনেমা করার সময় তিনি চেয়েছিলেন যে, টাইটেল কার্ডে যেন তাঁর নামটা আগে লেখা হয়। কারণটা কি শুধু মাত্র নিজের ইগো? না কি তাঁর ধারণা ছিল যে, ‘সুচিত্রা-উত্তম’ সিনেমা যতটা উত্তম কুমারের জোরে বক্স অফিসে চলে, ঠিক ততটাই তাঁর স্টার পাওয়ারের জন্যও? |
|
|
পাওলি |
সুচিত্রা সেনের এই সিদ্ধান্তের জন্য ওঁর প্রতি সম্ভ্রম জাগে। এটাও ভেবে ভাল লাগে যে, তাঁর এই ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েছিলেন সে যুগের পরিচালক এবং প্রযোজকরা। সবার ওপরে বলব এই ব্যাপারে কোনও আপত্তি না জানিয়ে উত্তমকুমার নিজেও ওঁকে সম্মান করেছিলেন। সুচিত্রা-উত্তমের জুটিটা এত দিন এত জোরালো হয়েছিল, কারণ দু’জনেই দু’জনকে সমান জায়গাটা দিতেন।
আপনি কি এটা করতে পারবেন? বা করতে চাইবেন? ধরুন দেব বা জিতের সঙ্গে কাজ করলেন। তা হলে কি বলবেন, নিজের নামটা আগে লেখা হোক?
না। আজ বলে নয়, কোনও দিনই আমি এটা বলতে পারব না। আমার কাছে নিজের নামটা আগে এল কি না, সেটা বড় বিষয় নয়। পরিচালকদের সঙ্গে আমার এমন একটা সম্পর্ক, সেখানে আমি এই কথাটা বলার কথা ভাবিওনি। আমার কাজ দর্শকদের ভাল লাগুক, সেটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। |
|
|
|
|
|