উৎকণ্ঠার কোনও সীমান্ত নেই।
২৬ দিন আনমনা ছিল ও বাংলাও। গোটা দিন কাজের ফাঁকে কখনও টিভিতে খবরের চ্যানেলে চোখ রাখা, কখনও কোনও সংবাদমাধ্যমের দফতরে ফোন করে জানতে চাওয়া কেমন আছেন আজ উনি? কবে ছাড়া পাচ্ছেন? কিছু কি মুখে তুললেন?
মাঝে মাঝে ছড়িয়েছে গুজব যেমন ছড়িয়েছে এ বাংলাতেও। সে সবে ভরসা করে অনেকে তো অনেক আগেই শোক প্রকাশ করে ফেলেছেন ফেসবুক-ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল সাইটে। বাকিরা টিভি-র ক্রলে চোখ বুলিয়ে ভরসা পেয়েছেন।
অনেকে আবার ঢাকার টিভিতে আস্থা খুইয়ে মোটা টাকার কল চার্জ গুনেও রাত-বিরেতে ফোন করেছেন কলকাতায় আনন্দবাজারের দফতরে “খুলনা থেকে বলছি, আজ উনি কেমন আছেন একটু বলবেন প্লিজ!”
একাত্তরের পরেও বাংলাদেশের নানা সিনেমা হলে দেখা যেত টালিগঞ্জের ছবি। স্বভাবতই ঢেউ তুলতেন উত্তম-সুচিত্রা। কলকাতার ছবি সব চেয়ে বেশি দেখতে পেতেন যশোরের মানুষ। ছবি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অস্ফুটে গুনগুন হেমন্ত-সন্ধ্যার সেই সব চিরসবুজ গান। স্বাধীনতার পরে তখন একটু একটু করে গড়ে উঠছে ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্প। উত্তম-সুচিত্রার প্রভাব কি একটুও পড়েনি তাদের কাজে? যশোরের দুই বোন সুচন্দা আর ববিতা নায়িকা হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয়তার শিখরে। দু’জনেই জানিয়েছেন, সিনেমা দেখে এসে আয়নার সামনে তাঁরা চেষ্টা করতেন মহানায়িকাকে অনুকরণের। ববিতা জানাচ্ছেন, সুচিত্রার সিনেমা এলে সুচন্দাই দেখার জন্য তাড়া লাগাতেন। খুঁটিয়ে লক্ষ করতেন, দুই বোনে আলোচনা করতেন, কেমন করে সংলাপ বললেন মহানায়িকা। কেমন করে ঘাড় ঘোরালেন।
কলকাতায় সুচিত্রার সঙ্গে দেখা করে সুচন্দা এক বার বলেছিলেন, “দিদি, আপনার জন্যই আমি আজ জনপ্রিয় নায়িকা হয়েছি!” মহানায়িকা সে কথা মানতে চাননি। সুচন্দাকে বলেছিলেন, “তোমার মেধার জোরেই তুমি জনপ্রিয়তা পেয়েছ। হয়তো আমার কাজ তোমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। কিন্তু কৃতিত্বটা তোমারই।” আর এক জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস বলছেন, দেখা হবে না জেনে তিনি মহানায়িকার জন্য কিছু উপহার পাঠাতে চেয়েছিলেন। মুনমুন সেন বলেছিলেন, সুচিত্রা বাংলাদেশের শিল্পীদের গাওয়া গান শুনতে খুব-খুব ভালবাসেন। ফেরদৌস তাই ঢাকা থেকে বেশ কিছু সিডি ও বই এনে পাঠিয়ে দেন মহানায়িকার কাছে। মুনমুন পরে ফেরদৌসকে বলেন, “মা তো বুঁদ হয়ে সব গান শুনেছেন। কিন্তু সিডিগুলো ফেরত দিতে চাইছেন। উনি তো উপহার নেন না!”
আশির দশকে এক সময়ে সিনেমার নকল সিডি-ক্যাসেটে বাংলাদেশ ছেয়ে যায়। সব চেয়ে বেশি বিক্রি কোন সিডি-র? অবশ্যই উত্তম-সুচিত্রা জুটির সব ছবি। এখন তো আসল সিডি-তেই মেলেন দুই বাংলার হৃদয়ে দোলা দেওয়া এই জুটি। কলকাতা এসে তাড়া তাড়া সিডি-ডিভিডি এখন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রামের মানুষ জন।
শুক্রবার তাই মন ভাল নেই ও বাংলারও। ছুটির দিনটাই তেতো হয়ে গিয়েছে সাতসকালের সেই নেই-খবরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদও বাংলাদেশের মানুষের হয়ে শোক জানিয়েছেন। |