একে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা। তার উপরে জুড়েছে দূষণও! সব মিলিয়ে ভরা শীতের কুয়াশাতে বাঙালির নাজেহাল অবস্থা। রেলেরও!
চলতি মরসুমে বারবার রাজ্য জুড়ে দাপট দেখিয়েছে কুয়াশা। তার জেরে বহু সময়েই ব্যাহত হয়েছে জনজীবন-পরিবহণ ব্যবস্থা। যার সর্বশেষ উদাহরণ বৃহস্পতিবার। বুধবারের মতোই এ দিনও ভোর থেকেই দাপট দেখিয়েছিল কুয়াশা। ফলে রাস্তায় বেরিয়ে যেমন অসুবিধায় পড়েছেন নাগরিকেরা, তেমনই জোরে ছুটতে পারেনি ট্রেনও। ফলে দূরপাল্লা ও লোকাল, সব ট্রেনেরই গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়েছে। রেল জানিয়েছে, এ দিন দিল্লি থেকে হাওড়ামুখী পূর্বা এক্সপ্রেস দেরিতে পৌঁছেছে। তাই আজ, শুক্রবার দিল্লির উদ্দেশে পূর্বা এক্সপ্রেস ছাড়বে না।
এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা। সূর্য উঠেছে কি না, বোঝাই যাচ্ছিল না! ঠান্ডাও যেন গায়ে কামড় বসাচ্ছে। বেলা দশটাতেও ট্যাক্সির কাচ তুলে দিতে হয়েছে। ভরদুপুরেও বেলেঘাটা থেকে অটোয় উঠেছিলেন এক তরুণী। চলন্ত অটোয় হাওয়ার দাপট সামলাতে কানে ওড়না চাপা দিতে হল তাঁকে।
এ দিন কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৬ ডিগ্রি কম। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি নীচে। এ দিনও থার্মোমিটারে পারদের ওঠানামা বুধবারের প্রায় সমান! |
এক ভাঁড় চায়ে উষ্ণতার ছোঁয়া। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী। |
আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদেরা বলছেন, কুয়াশার এই দাপটের পিছনে উত্তুরে হাওয়া-পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ভেল্কি যেমন দায়ী, তেমনই দায়ী বায়ুদূষণও। কী ভাবে?
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, উত্তুরে হাওয়া এ রাজ্যে কিছুটা পশ্চিম দিক ঘেঁষে বইবে, এটাই দস্তুর। পশ্চিম দিক ঘেঁষে হাওয়া বয়ে যাওয়ার ফলে এত দিন জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস বিহার-উত্তরপ্রদেশেই ঘোরাফেরা করত। ঘন কুয়াশার দাপট মিলত ওই জায়গাগুলিতেই। কিন্তু এ বারে হাওয়ার অভিমুখ কিছুটা বদলে গিয়েছে। তার ফলে সরাসরি উত্তর দিক থেকে হাওয়া বয়ে আসছে বাংলায়। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জলীয় বাষ্পও হাজির হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে। সেই জলীয় বাষ্প-ই ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়ার সংস্পর্শে এসে তৈরি করছে কুয়াশা।
এবং সেই কুয়াশাকেই দীর্ঘস্থায়ী হতে দিচ্ছে না দূষণ। পরিবেশবিদদের ব্যাখ্যা, কলকাতা-সহ রাজ্যের শহরাঞ্চলগুলির বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত ধোঁয়া-ধুলো রয়েছে। সেই ধোঁয়া-ধুলোই কুয়াশার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ফলে তা দীর্ঘ ক্ষণ বাতাসের নীচের স্তরেই থেকে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কুয়াশার সঙ্গে ধূলিকণা মিশে গিয়ে তৈরি করছে ঘন কুয়াশার চাদর।
কুয়াশার এই ঘন আস্তরণ ভেদ করতে পারছে না রোদও। ফলে মেঘলা আকাশে যেটুকু সূর্যের আলো দেখা মেলা সম্ভব, তা-ও মিলছে না। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, “রোদের তেজ না থাকায় কুয়াশা কাটতেও সময় লাগছে।” বেলা পর্যন্ত কুয়াশা না কাটায় দেরি হচ্ছে ট্রেন চলাচলেও।
এই দূষিত কুয়াশার দাপট বাড়াচ্ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়তে পারে। ফুসফুসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (পালমোনোলজিস্ট) পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলেন, “বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হতে পারে।” চিকিৎসকদের পরামর্শ, সামান্য সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে আম-জনতার প্রশ্ন, কুয়াশার দাপট আর কত দিন চলবে?
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, গোটা রাজ্যে আরও দিন দুয়েক কুয়াশার দাপট চলবে। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে তিন-চার ডিগ্রি নীচে থাকবে। কুয়াশা কাটলেও শীতের দাপট এখনই বাড়বে না। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাস বলেন, “শনিবারের পর থেকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা দু’টোই বাড়বে। কড়া শীতের পূর্বাভাস নেই।” |