কুপিয়ে খুন স্ত্রী, দুই শিশুকে
স্ত্রী এবং দুই পুত্র সন্তানকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার তুফানগঞ্জ থানার চামটা-কৃষ্ণনগর কলোনিতে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের নাম আর্জিনা বিবি (২৪) এবং চার বছরের আজিনুর আলি ও আড়াই বছরের আসিক আলি। কাজে যাবেন বলে সকালে ভাত রান্না করতে বসেছিলেন আর্জিনা বিবি। সেখানেই তাঁকে স্বামী কুপিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। তার পরে ছেলেদের খুন করে পেশায় রিকশাচালক কলিমুদ্দিন মিঁয়া। চিৎকারে বিষয়টি টের পেয়ে অভিযুক্তকে ধরে ফেলেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “তদন্ত চলছে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাত বছর আগে তুফানগঞ্জেরই গদাধর সেতু লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা পাহারুদ্দিন মিয়াঁর মেয়ে আর্জিনার সঙ্গে বিয়ে হয় কলিমুদ্দিনের। প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তির তাঁর ডান হাত ছোট এবং অকেজো। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে গোলমাল হত। তাঁদের দুই পুত্র সন্তানের জন্মের পরেও সে সমস্যা কমেনি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। কয়েক দফায় স্ত্রীর উপর অত্যাচারের অভিযোগ ওঠায় গ্রামে সালিশি সভাও হয়েছিল।
নিহত তিন জনের দেহ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তুফানগঞ্জের চামটা কৃষ্ণনগর এলাকায় বৃহস্পতিবার।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সম্প্রতি আর্জিনা বিবি পাকা রাস্তার কাজে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন। ওই কাজ পছন্দ ছিল না কলিমুদ্দিনের। সম্প্রতি কাজের জায়গা থেকে তিনি স্ত্রী’কে মারধর করতে করতে বাড়িতেও নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ। বুধবার রাতেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বচসা হয়। অভিযুক্ত নানা কারণে স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন বলে অভিযোগ। কলিমুদ্দিনের ওই বাড়িতে স্ত্রী, দুই পুত্র ছাড়াও মা কছিমন বিবি, বোন লাইলি বিবি দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। তবে কলিমুদ্দিনের মা ও বোন আলাদা থাকেন। এ দিন সকালে কছিমন ও লাইলির চিৎকারে প্রতিবেশীরা ভিড় করেন।
পুলিশ জানায়, আর্জিনার মুখে ও গলায় এলোপাথাড়ি কোপ দেওয়া হয়েছে। শিশু দু’জনের গলায় কোপ দেওয়া হয়েছে। খুনের ঘটনায় ব্যবহার করা ধারাল অস্ত্র বা দা পুলিশ উদ্ধার করেছে। অভিযুক্ত নিজের দোষ স্বীকার করেছে বলে তদন্তকারী অফিসারদের দাবি। তবে ঠিক কী কারণে তিনি খুন করেছেন তা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। অভিযুক্তের মা কছিমন বিবিকেও পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, “ছেলে মানসিক ভাবে অসুস্থ। ওর শরীরে নিশ্চয়ই কিছু ভর করেছিল। তাই ও এই রকম একটা কাজ করেছে।”
অভিযুক্ত কলিমুদ্দিন।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, “ওই যুবক অসুস্থ ছিল বলে জানতাম। মাঝেমধ্যে তার কবিরাজি চিকিৎসা করানো হত। কিন্তু এ ভাবে স্ত্রী-পুত্রদের খুন করবে ভাবাই যাচ্ছে না।” আরে এক বাসিন্দা সফিরন বিবি বলেন, “সকালে চিৎকার শুনে গিয়ে তিনটি দেহ পড়ে থাকতে দেখি। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।” সরুবালা বর্মন, সারথি বর্মনদের মত প্রতিবেশীরা অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি তুলেছেন। মৃত আর্জিনা বিবির বাবা পাহারুদ্দিন মিয়াঁ অভিযুক্ত জামাইয়ের শাস্তির দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, “মেয়ের উপর জামাই দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করত। এর আগেও পুলিশকে জানিয়েছি। ওর কড়া শাস্তি চাই আমরা।” নাককাটিগাছ এলাকার উপ-প্রধান শচীন্দ্রনাথ বর্মন, “অভিযুক্ত আগেও স্ত্রী উপর অত্যাচার করত। সালিশি সভাও হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে যে স্ত্রী, পুত্রদের হত্যা করতে পারে, তার ফাঁসি হওয়া উচিত।”
এ দিন সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় চারদিকে চাপ চাপ রক্ত। ঘরের মধ্যে বিছানাটায় মশারি টাঙানো। ছড়ানো ছিটানো চারদিক। কান্না গোটা গ্রাম জুড়ে। খুন হয়ে যাওয়া ছোট দুটি শিশুর ছেলের সাথীদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। দুটি শিশু যে অঙ্গনওয়ারি সেন্টারে যেতাম, সেখানেও কান্নার রোল। অঙ্গনওয়ারি কর্মী ছবি দাস, সরস্বতী বর্মন ওই দুই শিশুর মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকে কেঁদেই চলেছেন। ছবিদেবী বলেন, “বুধবার সকালেও এসেছিল দুই ভাই। ডিম দিয়ে খেয়েছিল। আর্জিনা কাজে যাওয়ার সময় প্রায় প্রতিদিন বলে যেতে ছেলেদের দেখতে। ঠিকমত খেতে দিতে বলত। এ ভাবে ওরা চলে যাবে ভাবতেই পারছি না।”

—নিজস্ব চিত্র।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.