কলেজে নির্বাচন নিয়ে ‘বহিরাগত’র দাপটে গোলমাল চলছেই উত্তরবঙ্গে। বৃহস্পতিবারও মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গণ্ডগোল হয় শিলিগুড়ি থেকে মালদহ, ডালখোলা থেকে বালুরঘাটে। শিলিগুড়ি কর্মাস কলেজে ছাত্র পরিষদ এবং টিএমসিপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ডালখোলায় টিএমসিপি-সিপি’র সদস্য সমর্থকদের সঙ্গে মারপিট হয় এসএফআইয়ের। সেখানে গোলমাল ঠেকাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। পুলিশের একটি জিপ ভাঙচুর হয়। মালদহ কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের বাধায় অন্য কোনও সংগঠন মনোনয়ন তুলতেই পারেনি বলে অভিযোগ। একই অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর কলেজেও। শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে এসএফআইয়ের সমর্থকদের মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে। কিন্তু মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে পুলিশ কার্যত নীরব ছিল বলে অভিযোগ।
গত বুধবার মনোনয়ন পত্র তোলার সময় গোলমালের পরে এ দিন বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছিল শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে। |
মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার সময়ে এসএফআই সমর্থকদের বাধা দেওয়ার জন্য বাঁশ হাতে ছুটে যেতে দেখা যায় কয়েকজনকে। অভিযোগ, হামলার চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। পুলিশ গিয়ে হঠিয়ে দেয়। পরে পুলিশি ঘেরাটোপে ইন্দ্রাণী সরকার-সহ এসএফআই-এর প্রার্থীরা কলেজে ঢুকে মনোনয়ন পত্র জমা দেন। প্রসঙ্গত, বুধবারই মনোনয়ন পত্র তুলে বেরোনোর সময় ইন্দ্রাণীকে কলেজ চত্বরেই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের ভূমিকায় তাই তাঁরা খুশি বলে জানান, কলেজের এসএফআই ইউনিট সম্পাদক পৃথা সরকার। তবে তাঁদের ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় অবশ্য বলেন, “আমরা কোথাও উত্তেজনা ছড়াইনি। হারার ভয়ে বিরোধীরা এইসব কথা বলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে।”
যদিও শিলিগুড়ি কর্মাস কলেজে এ দিন মনোনয়ন জমা দেওয়া ঘিরে সংঘর্ষ হয়। পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় রাস্তাতেই ছাত্র পরিষদের প্রার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থক এবং একদল বহিরাগতদের বিরুদ্ধে। উভয়পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মারপিট শুরু করলে পুলিশ গিয়ে লাঠি চালিয়ে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। পরে পুলিশি নিরাপত্তায় ছাত্র পরিষদ মনোনয়ন জমা দেয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন জখম হয়েছেন বলে দু’পক্ষ দাবি করেছেন। ঢিলের আঘাতে তাঁদের মধ্যে তিন জনের মাথা ফেটেছে বলে অভিযোগ। একজন পুলিশ কর্মীও জখম হন। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “সব কলেজেই যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। ছাত্রীদের পুরো নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। কলেজে কোনও রকম গোলমালের খবর নেই। বাইরে কোথায় গোলমাল হলে পুলিশ পরিস্থিতি কড়া হাতে সামলেছে।” |
মালদহ কলেজে প্রায় দিনভর টিএমসিপি’র কর্মী-সমর্থকেরা গেট আটকে রাখায় এসএফআই, ছাত্র পরিষদ মনোনয়ন নিতে ঢুকতে পারেননি বলে অভিযোগ। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নূর-ও বলেন, “এসএফআইয়ের কায়দাতেই টিএমসিপি বহিরাগতদের নিয়ে মালদহ কলেজে তাণ্ডব চালাচ্ছে।” টিএমসিপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
একইভাবে দক্ষিণ দিনাজপুরে হরিরামপুর কলেজে এসএফআই কোনও মনোনয়ন পত্র তুলতে পারেনি বলে অভিযোগ। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক তাপস মণ্ডল বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বহিরাগতদের নিয়ে দলবেঁধে গেটের সামনে ব্যারিকেড করে রাখে। তাতে কেউ ঢুকতে পারেননি।” বুধবার ওই কলেজে সংঘর্ষের ঘটনার পরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগে ভিত্তিতে এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি-সহ মোট ৮ জন ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে এসএফআই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুললেও তা অস্বীকার করেছেন জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “জেলার সবগুলি কলেজে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল।”
উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলার শ্রীঅগ্রসেন কলেজেও মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে এ দিন গোলমাল হয়েছে। ডালখোলায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এসএফআইয়ের। সেখানে অলিখিত ভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং ছাত্র পরিষদের জোট হয়েছে। এসএফআই এর অভিযোগ, এ দিন দুপুরে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময়ে কলেজে ঢোকার মুখেই রাস্তায় তৃণমূল এবং ছাত্রপরিষদের সমর্থকরা আটকে দেয়। লাঠি দিয়ে মারধর করে। ঢিল ছোঁড়ে। পুলিশের গাড়িতেও ভাঙচুর হয়। পরে আরও পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “দুই পক্ষের গোলমালের মধ্যে পুলিশের একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে জখম হয়েছে এক পুলিশ কর্মীও।” |
মালদহ কলেজে টিএমসিপি সমর্থকেরা ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়। |
ডিওইএফ-এর উত্তর দিনাজপুরের জেলা কমিটির সদস্য সুরজিৎ কর্মকার অভিযোগ করেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং ছাত্র পরিষদের বহিরাগতরা কলেজের রাস্তায় আমাদের ছাত্রদের উপর লাঠি ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমাদের সমর্থকরা জখম হয়েছেন। মেয়েদেরকেও মারধর করা হয়েছে। গর্ভবতী মহিলা এক ছাত্রীকে চড়-ও মেরেছে তারা।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ঢিল মেরে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও ওঠে। উল্টে পুলিশ এসে তাদেরকেই ধমকেছে এসএফআই-এর অভিযোগ। ইসলামপুরের এক ডেপুটি মেজিস্ট্রেট কলেজে যাওয়ার জন্য ওই রাস্তায় গেলে তার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় এসফআই। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ডালখোলা টাউন সভাপতি প্রদীপ সরকার পাল্টা অভিযোগ করেন।, “কলেজে এসএফআই এর সংগঠন নেই। তাই ওরা কলেজেই যায়নি।” ছাত্র পরিষদের সদস্য তথা ডালখোলা শ্রীঅগ্রসেন কলেজের ছাত্র ইমন ভাওয়ালও এক দাবি করেছেন। |