কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) ডাকা বন্ধে হুমকি উপেক্ষা করে উত্তরবঙ্গের জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক নজরদারিতে নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন। মালদহ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলার সমতল এলাকায় ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বৃহস্পতিবার জানান, কেএলও জঙ্গিরা সাধারণ মানুষের উপরে হামলা চালিয়ে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরির ছক কষেছে বলেই বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কুমারগ্রামে এনবিএফবি জঙ্গি সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। আজ, শুক্রবার উত্তরবঙ্গ ও লাগোয়া অসমের ৪ জেলায় ২৪ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে কেএলও। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক রাখতে সব পদক্ষেপ করা হয়েছে।” |
পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্তাদের আশঙ্কা, যে হেতু কেএলও-র ডাকা বন্ধে অতীতে উত্তরবঙ্গে কোনও প্রভাব পড়েনি, সে জন্য নাশকতা ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে মরিয়া জঙ্গিদের একাংশ। ইতিমধ্যেই নামনি অসম হয়ে কেএলও জঙ্গিদের একটি বড় দল লাগোয়া উত্তরবঙ্গে ঢুকেছে বলেও আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। নাশকতা এড়াতে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, হাট-বাজার-সহ জনবহুল এলাকায় লাগাতার তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সন্দেহভাজন কেএলও জঙ্গিদের নাম-ছবি সম্বলিত পোস্টারও উত্তরবঙ্গের নানা এলাকায় সেঁটে দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার কুমারগ্রামে এনবিএফবি জঙ্গি সন্দেহে অ্যান্টনি বসুমাতারি নামে এক যুবককে ধরা হয়। পুলিশের অভিযোগ, বুধবার রাতে তিন যুবক অসম থেকে বাইকে ঢুকে পড়েছে। তাদের একজন হল অ্যান্টনি। সতর্কতা নেওয়া হয়েছে সীমান্তেও। ভুটান ও নেপাল সীমান্তে এসএসবিকে সতর্ক করা হয়েছে। ডুয়ার্সের কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে টহলে মোতায়েন করা হয়েছে। |
কেএলও-র অনাথ রায়, দয়াল রায় ওরফে ধনেশ্বর রায়, পবন রায়, র্যাম্বো রায় ওরফে সমর রায়, এবং মৃণাল রায় নামের ৫ জন কেএলও জঙ্গি অসম থেকে উত্তরবঙ্গে ঢুকেছে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা।
গত ২৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় বোমা বিস্ফোরণে ৬ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনায় কেএলও যুক্ত সন্দেহ করে পুলিশ কয়েকজন লিঙ্কম্যান ও প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে নারায়ণ রায় ওরফে তরুণ থাপার এক বোন ও এক ভগ্নিপতিও রয়েছেন। পুলিশ কেএলও সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের হয়রান করছে অভিযোগ তুলে তাদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি তোলে তারা। সেই সঙ্গে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ তুলে ১৭ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টা বনধ-এর হুমকি দিয়েছিল কেএলও। |
শুক্রবার কেএলও-র ডাকা বন্ধে জনজীবন
স্বাভাবিক রাখতে তৎপর প্রশাসন। ছবি: সন্দীপ পাল। |
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও পাঁচ কেএলও জঙ্গির ছবি-সহ পোস্টার দেওয়া হয়। তারা হল মঞ্চলাল সিংহ ওরফে নীলাম্বর রাজবংশী ওরফে ডাক্তার, নারায়ণ রায় ওরফে তরুণ থাপা, বাঙালি দাদা ওরফে জয়দেব মোদক ওরফে টম অধিকারী ওরফে বাবলু, প্রদীপ রায় ওরফে ইকবাল সিদ্দিকি ও নিত্যানন্দ ওরফে জামাই। তাদের দেখামাত্র ০৩৫৬১-২২৮০৪২/২২৮৫৫১ নম্বরে বা থানায় জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। পোস্টারে বলা হয়েছে, এ জন্য পুরস্কার মিলবে। তবে খবরদাতার নাম গোপন রাখা হবে।
|
ফেরার জঙ্গিদের ধরতে উত্তরবঙ্গের নানা জায়গার সঙ্গেই
ছবি দিয়ে প্রচার জলপাইগুড়িতেও। ছবি: সন্দীপ পাল। |
নামনি অসমেও পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয় বলে পুলিশ কর্তারা দাবি করেছেন।
সেখানে বাসিন্দাদের একাংশও জঙ্গিদের উপরে তিতিবিরক্ত। পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ ৩ সন্দেহভাজন বড়ো জঙ্গি তোলা আদায় করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে ঘেরাও হয়ে পড়ে। দু’জন গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। তৃতীয়জনকে ধরে মারধর শুরু করে জনতা। তার মোটরবাইকটি জনতা জ্বালিয়ে দেয়। পরে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। ধৃত রাডাফ নার্জিনারির বাড়ি গোসাইগাঁওয়ের শিলবাড়ি গ্রামে। জঙ্গিরা তেলিপারা গ্রামের এক মুদি দোকানির কাছে ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করে হুমকি চিঠি দিয়েছিল। কোকরাঝাড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুরজিত সিং পানেশ্বর জানান, “পলাতক জঙ্গিদের খোঁজ চলছে।” |