স্বাস্থ্য বিমার কার্ড থাকা সত্ত্বেও বিপিএল পরিবারের রোগীর চিকিৎসার জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠল মহিষাদলের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে।
নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, চিকিৎসার জন্য নয়, ভর্তির আগে নার্সিংহোমে কিছু পরীক্ষা করিয়েছিলেন ওই রোগী। তারই টাকা চাওয়া হয়েছে। ওই পরিবারটি ইতিমধ্যে মহিষাদল ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর মহিষাদলের যুগ্ম বিডিও প্রদ্যোৎকুমার পালুই বলেন, “ভর্তি না নিয়ে পা্যথোলজিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো আর পরে তার জন্য টাকা চাওয়াটা নার্সিংহোমের চালাকি। এটা ঠিক নয়। এই ভাবে দরিদ্রদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
হলদিয়া ব্লকের বিজয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি খলিলুর রহমান বুকে ও পেটের যন্ত্রণা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ওই নার্সিহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী লায়লা বিবির অভিযোগ, “কার্ড থাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসা পাব ভেবেই এসেছিলাম। কিন্তু নার্সিংহোমে ওরা ভর্তি নেওয়ার পর টাকা চায়। চিকিৎসায় অবহেলা হতে পারে ভেবে তখনকার মতো ২,২০০ টাকা দিই। পরে আরও বেশ কিছু পরীক্ষার জন্য সতেরোশো টাকা দিই। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ছাড়ার সময় নার্সিংহোম আরও পাঁচ হাজার টাকা চায়। না দিলে ছাড়া হবে না বলে ভয় দেখায়। বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছি বলে লিখিত দিতে বলে আমাদের।” এরপর লায়লাদেবী ব্লক প্রশাসনে অভিযোগ জানালে হইচই পড়ে যায়। বিকেলে খলিলুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে দু’হাজার টাকা ফেরতও দেয় নার্সিংহোম।
ওই নার্সিেংহামের মালিক আশিস ভক্তা নিজে একজন চিকিৎসক। তাঁর অবশ্য দাবি, “নার্সিংহোমের কর্মীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতেই এই অভিযোগ উঠছে। রোগীকে ভর্তি নেওয়ার আগে কিছু পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তাই টাকা নেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি নেওয়ার পর সমস্ত দায়িত্ব নার্সিংহোমের। আগে যা করিয়েছে, তার নয়।”
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার মাধ্যমে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর জন্য ব্লকে-ব্লকে একাধিক নার্সিংহোম, হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী, স্বাস্থ্য বিমা কার্ড রয়েছে এমন পরিবারের রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার কথা নার্সিংহোমগুলির। পরে ওই টাকা বিমা কোম্পানি থেকে পেয়েও যায় তারা। তা সত্ত্বেও দরিদ্র লোকজনের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে নার্সিংহোমগুলি প্রায়শই প্রতারণা করে বলে অভিযোগ। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নোডাল অফিসার অসীমকুমার পাল বলেন, “মাসে দু’-একটি করে অভিযোগ আসে নিয়মিত। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে টাকা ফেরত দিতে হয় নার্সিংহোমগুলিকে। চুক্তি বাতিল করাও হয়ে থাকে। অভিযোগ গুরুতর হলে স্বাস্থ্য দফতর নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করে দিতে পারে।” মহিষাদলের নার্সিংহোমটির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে অসীমবাবু বলেন, “তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে।” |