কোনও মামলা নিয়ে বিশদে খোঁজ খবর করতে চান? কোনও মামলার তদন্তে আপনি অখুশি? অথবা কোনও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্ন উঠেছে মনে? সরাসরি পুলিশ সুপারের কাছে তা নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন। অন লাইনে পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে পৌঁছনোর এমন এক ব্যবস্থা করেছে দার্জিলিং জেলা পুলিশ। পুলিশের সরকারি ওয়েবসাইটে একটি নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে‘রিপোর্ট ইন অ্যাকশন’।
দার্জিলিং পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বিভাগে চারটি ক্ষেত্র বা অংশ রাখা হয়েছে। ওয়েবসাইটির যে কোনও পেজ বা সেকশন গেলেও আলাদাভাবে ওই বিভাগটি সবার উপরে বাঁ দিকে দেখা যাবে। সেখানে অভিযোগকারীর নাম, মোবাইল নম্বর, মামলার জেনারেল ডায়েরি (জিডি) নম্বর এবং অফিসারের নাম পর পর লেখার ব্যবস্থা রয়েছে। সব শেষে যে বিভাগটি রাখা হয়েছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিপোর্ট টু এসপি’। যে কোনও অভিযোগকারী প্রতিটি ক্ষেত্র ভরে শেষে রিপোর্ট টু এসপি-তে ক্লিক করলেই সমস্ত তথ্য সোজাসুজি চলে যাবে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে। তার পরে তিনি সেই অভিযোগকারীর মোবাইল নম্বরে নিজেই টেলিফোন করে বিষয়টি শুনে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। দার্জিলিং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানানোর বিষয়টি প্রয়োজনে গোপন রাখার ব্যবস্থাও থাকছে। |
ওয়েবসাইটেই সরাসরি পুলিশ-কর্তাকে অভিযোগ জানানো যাবে। |
দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল সম্প্রতি কয়েকটি অভিযোগ পেয়েওছেন। পুলিশ সুপার বলেন, “একবার থানা বা ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করার পর অনেক সময়ই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে। মামলার নির্দিষ্ট অফিসার সম্পর্কেও নানা বক্তব্য উঠে আসে। অনেকেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে পারেন না। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।” পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বর্তমান যুগ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। পুলিশ ব্যবস্থাকেও এর সঙ্গে যতটা সম্ভব খাপ খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম এখন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। সব কিছু মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা। অভিযোগ পাওয়ার পর তা খতিয়ে দেখে অভিযোগকারীকে তা জানিয়েও দেওয়া হবে।
পুলিশের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন পাহাড়ের বাসিন্দা তথা আইনজীবী প্রতাপ খাতি। প্রতাপবাবু গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদকও। তিনি বলেন, “মাঝেমধ্যেই অনেকে এসে জানান, অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ‘দেখছি দেখব’ বলে বারবার ঘোরাচ্ছে। নতুন এই ব্যবস্থায় পুলিশ সুপারকে সব জানানো যাবে। তবে আমরা এই সমস্যার জন্য অনেক অভিযোগের প্রতিলিপি পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়ে দিই। এ বার অনলাইনে তা জানাব।” নতুন ব্যবস্থা পর্যটন ক্ষেত্রেও লাভবান হবে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল। তিনি বলেন, “অনেক দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা ঘুরতে এসে নানা সমস্যায় পড়েন। ব্যাগ, ক্যামেরা চুরি’র মত ঘটনা ঘটে। পুলিশেও অভিযোগও দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে উনি নিজের গন্তব্যে চলে গিয়ে মামলা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতে পারেন না। আমাদের কাছেও খোঁজখবর নেন। নতুন ব্যবস্থায় এই ধরনের পর্যটকেরা খুবই উপকৃত হবেন।”
ব্রিটিশ আমলে ১৮৩৯ সালে ২৭ নভেম্বর গঠিত হয় দার্জিলিং জেলা পুলিশ। পরের পর দুই সহকারী সাব ইন্সপেক্টর এবং ১২ জন ফুটম্যানকে (কনস্টেবল) নিয়ে কাজ শুরু হয়। ১৯৮০ সালে স্থায়ী পুলিশ সুপারের পদ সৃষ্টি হয়। ২০১২ সালে দার্জিলিং জেলা পুলিশ জেলা থেকে আলাদা করে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট গঠিত হয়। বর্তমানে পাহাড়ের তিনটি মহকুমা এবং শিলিগুড়ির গ্রামীণ এলাকা মিলিয়ে ১৪টি থানা রয়েছে দার্জিলিং পুলিশের আওতায়। |