রাজ্যের বিভিন্ন পরিবহণ নিগম লোকসানে ধুঁকছে। সেগুলিকে লাভজনক করে তুলতে এ বার দ্বিমুখী রাস্তায় নামছে রাজ্য সরকার। প্রথমত, কিছু কর্মীর স্বেচ্ছাবসরের ব্যবস্থা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, উদ্বৃত্ত কর্মী পুনর্বিন্যাস। নতুন এই বিন্যাসে কিছু কর্মীকে অন্য বিভাগে বদলি করে কাজে লাগানো হবে।
পরিবহণের নানা ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত কর্মীর চাপ কমাতে অনেক আগেই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। অবশেষে আগামী ৩১ জানুয়ারি সেই প্রকল্প সরকারি ভাবে চালু হচ্ছে। ওই দিন কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি)-র প্রায় ২০০ কর্মীর হাতে স্বেচ্ছাবসরের নথিপত্র তুলে দেবেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।
স্বেচ্ছাবসরের সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন নিগমে উদ্বৃত্ত কর্মীর বহর কমাতে কাজের সুযোগ অনুযায়ী তাঁদের পুনর্বিন্যাসের বন্দোবস্ত হচ্ছে। প্রথমে পরিবহণ দফতরের যে-সব বিভাগে কর্মী কম, উদ্বৃত্ত কর্মীদের সেখানে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যেমন প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের পাঁচটি নিগম থেকে উদ্বৃত্ত এবং বদলিতে ইচ্ছুক, এমন প্রায় ৫০ জন কর্মীকে পিভিডি এবং পুলকার বিভাগে বদলি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র নিজেই বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়ে বলেন, “বদলির সুযোগ নেওয়ার জন্য নিগম থেকে কয়েকশো কর্মীর আবেদন জমা পড়েছে। আমরা তাড়াহুড়ো করতে চাইছি না। ধীরেসুস্থে তাঁদের যাচাই করে নিয়েই বদলি করা হচ্ছে।” মন্ত্রীর দাবি, এটি অভিনব সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
এমন বদলির সিদ্ধান্ত অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে নতুন কিছু নয়। এর আগে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মহীন কর্মীদের বিভিন্ন বিভাগে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতে ভাল ফল মিলেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। স্বাস্থ্য দফতরে এই প্রক্রিয়া সফল হলে অন্যান্য দফতরেও তা রূপায়ণ করা হবে বলে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছিলেন। মানবসম্পদ উন্নয়নের নীতি মেনে এ বার পরিবহণ দফতরে কর্মী-বিন্যাসের সেই প্রক্রিয়া চালু করতে চলেছেন মদনবাবুরা।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বদলির ব্যাপারে এ দিনই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আজ, শুক্রবার স্বেচ্ছাবসরের বিজ্ঞপ্তি জারি করবে সরকার। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, স্বেচ্ছাবসরের জন্য সরকারের কোষাগার থেকে কর্মী-পিছু ১০ লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ হবে। প্রথম ধাপে এই খাতে ১৩০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে অর্থ দফতর।
পরিবহণ নিগমের বিভিন্ন বিভাগে প্রচুর বয়স্ক কর্মী আছেন। পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “তিনটি নিগম মিলিয়ে প্রায় ৯০০ কর্মী স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ব্যাপারে আমরা কোনও রকম জোর খাটাইনি। আমরা তাঁদের সম্মানের সঙ্গেই বিদায় জানাব। তার বদলে কমবয়সি কর্মী নেওয়া হবে।” মন্ত্রী মনে করেন, এই স্বেচ্ছাবসর এবং বদলির প্রক্রিয়া নিগমগুলিকে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে সাহায্য তো করবেই। সেই সঙ্গে এই ব্যবস্থা সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ কমানোরও সহায়ক হবে।
এর আগে পরিবহণ নিগমগুলিকে লাভজনক করে তুলতে তাদের উদ্বৃত্ত জমি দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই সিটিসি-র ছ’টি ডিপোর জমি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বার শুরু হল উদ্বৃত্ত কর্মী সঙ্কোচনের প্রক্রিয়া। |