প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেছে কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য সরকার সময়মতো প্রশিক্ষক বাছাই করতে না-পারায় চাকরির পরীক্ষার জন্য নিখরচায় তালিম লাভের সুবিধা হারাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের অনগ্রসর ও তফসিলি পড়ুয়ারা।
অনগ্রসর সম্প্রদায় ও তফসিলি জাতির ছেলেমেয়েদের ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা সরকারি চাকরির পরীক্ষার উপযোগী করে তুলতে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় মন্ত্রক বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের প্রকল্প শুরু করেছে। কোন রাজ্যে কোন সংস্থা প্রশিক্ষণ দেবে, তা বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলোকে সময়ও বেঁধে দিয়েছে দিল্লি। অথচ এ রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতর নির্ধারিত সেই সময়সীমার মধ্যে সংস্থা বাছাই করে উঠতে পারেনি। ফলে পশ্চিমবঙ্গের তফসিলি জাতি ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী নিখরচায় প্রশিক্ষণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে দফতর-সূত্রে জানা গিয়েছে।
এবং কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, আগামী তিন বছর সুযোগটি নাগালের বাইরেই থাকবে। কারণ, এ দফায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি চালু হয়েছে তিন বছরের জন্য। দফতরের অন্য অংশের অবশ্য দাবি, এতে আখেরে ক্ষতি কিছু হয়নি। “দফতর নিজেই রাজ্যে এমন একগুচ্ছ প্রশিক্ষণ শিবির চালায়। ফলে বেসরকারি সংস্থা নির্ভর প্রশিক্ষণে বাড়তি তেমন লাভের আশা ছিল না।” যুক্তি এক কর্তার।
তবু প্রশ্ন উঠছে, সম্পূর্ণ নিখরচার কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ প্রকল্পের সুবিধাটুকু পাওয়ার জন্য সংস্থা বাছাইও করে ওঠা গেল না কেন?
দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা: সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মোট ৩৯টি সংস্থা প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালাতে রাজি হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে ১৫টিকে বাছাই করা হয়। তাদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে রিপোর্টও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও জেলাই কোনও রিপোর্ট দেয়নি। এমতাবস্থায় কেন্দ্রের কাছে কোনও প্রস্তাব পাঠানো হবে কি না, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে দফতরের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের মতামত চাওয়া হয়। তিনিও কোনও মতামত না-দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আর এগোনো হয়নি বলে দফতর-সূত্রের দাবি। মন্ত্রী নিজে কী বলেন?
উপেনবাবু সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য সরকার নিজেই এ জাতীয় নানাবিধ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ফি বছর চল্লিশ জন ছাত্র-ছাত্রীকে আইএএস পরীক্ষার তালিম নিতে দিল্লি পাঠানো হচ্ছে সরকারি খরচে। মাইক্রোসফ্ট ও বিলেতের বোর্নভিল বিশ্ববিদ্যালয় তফসিলি জাতি-উপজাতির ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিউটিশিয়ান তৈরির প্রশিক্ষণও চলছে গ্রামে গ্রামে।”
সব মিলিয়ে রাজ্যে অনগ্রসর-তফসিলিদের জন্য পেশামুখী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কোনও অভাব নেই বলে দাবি করেছেন উপেনবাবু। মন্ত্রীর অফিস-সূত্রে বলা হয়েছে, উল্লিখিত কেন্দ্রীয় প্রকল্পটির আওতায় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিতে চেয়ে আবেদন করেছে যে সব সংস্থা, তাদের পরিকাঠামো-সহ অন্যান্য যোগ্যতামান সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের তরফে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগে দিল্লিকে নাম পাঠানো যাবে না। দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, “এ সব নিয়ে তাড়াহুড়ো করা মানে রাজ্যের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। তার চেয়ে বরং একটু দেরি হোক।”
দফতরের অন্য মহল কিন্তু মনে করছেন, দেরিটা ‘একটু’ না-হয়ে বেশিও হতে পারে। এঁদের যুক্তি: কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পটি চালু করেছে তিন বছরের জন্য। ফলে এ বার যে সব সংস্থা নির্বাচিত হয়েছে, আগামী তিন বছর তারাই প্রশিক্ষণ দেবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্র বেছেছে মাত্র তিনটি সরকারি সংস্থাকে, যাদের মাধ্যমে সাকুল্যে সাড়ে চার হাজার জন তালিম পাবে। রাজ্য সরকার নিজে থেকে দিল্লিতে নাম না-পাঠানোয় পরের বছর পশ্চিমবঙ্গের কর্মসূচিতে নতুন কোনও সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না দফতর-কর্তাদের এই অংশ।
কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যয় মন্ত্রক সূত্রের খবর: তফসিলি জাতি ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিখরচায় চাকরির পরীক্ষার তালিম দিতে সারা দেশে ৩৪২টি সংস্থাকে বাছাই করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রশিক্ষণ পাবে পাঁচ লক্ষাধিক পড়ুয়া। মহারাষ্ট্রে সর্বাধিক প্রায় দেড় লক্ষ। এ ছাড়া গুজরাতে ৫৩ হাজার, মধ্যপ্রদেশে ৮২ হাজার, উত্তরপ্রদেশে ৪২ হাজার ছেলেমেয়ে ওই সুযোগ পাচ্ছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে তা সীমিত থাকছে ওই সাড়ে চার হাজারে।
সময়ে সংস্থা বাছাই না-হওয়াতেই সংখ্যাটা কয়েক গুণ বাড়তে পারল না বলে আক্ষেপ দানা বেঁধেছে অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের অন্দরে। |