পাটের সহায়ক মূল্য বাড়ান, কেন্দ্রকে চিঠি মমতার
পাটের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে দাবি জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ মাসের গোড়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি নিয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকে গিয়ে বৈঠক করেছেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী মলয় ঘটক, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্যরা। মলয়বাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী গ্রামের গরিব পাট চাষিদের কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। পাটের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না বাড়ালে গ্রামের প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।”
সম্প্রতি ২০১৪-১৫ সালের জন্য কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কর্পস্ অ্যান্ড প্রাইসেস্ (সিএসিপি) টিডি-৫ মানের কাঁচা পাটের কুইন্ট্যাল পিছু ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ২৪০০ টাকা ঠিক করেছে। কিন্তু রাজ্য কৃষি দফতরের কর্তাদের হিসেব অনুযায়ী ওই মানের কাঁচা পাট উৎপাদনের খরচ কুইন্ট্যাল পিছু ৩১৭৮ টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রায় ৭৭৮ টাকা কম দামে তা বিক্রির মূল্য ঠিক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পাট চাষিরা এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক খাদ্য সামগ্রী ও চিনি বহনের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাট চাষিদের তার জন্য যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে প্রায় ৪০ লক্ষ পরিবার পাট চাষের ওপরে প্রত্যক্ষ ভাবে নির্ভরশীল। পাট চাষিরা ছাড়াও কয়েক লক্ষ শ্রমিক পরিবার চটকলে বস্তা তৈরির কাজ করে সংসার চালান। সারা দেশের মধ্যে পাট উৎপাদনে প্রথম স্থানে রয়েছে রাজ্য। ২০১২-১৩ সালে রাজ্যে প্রায় ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। সব মিলিয়ে কাঁচা পাট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮৩ লক্ষ ৪৯ হাজার বেল। সারা দেশের পাট উৎপাদনের প্রায় ৭৫ শতাংশ। সেই কারণে রাজ্য কৃষি দফতর কেন্দ্রের ঠিক করা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে চিন্তিত।
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, নিয়ম মেনেই পাটের সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়েছে। কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কর্পস্ অ্যান্ড প্রাইসেস্ (সিএসিপি)-এর চেয়ারম্যান অশোক গুলাটি রাজ্যের বক্তব্য মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “২০১২-১৩ আর্থিক বছরে প্রায় ৩৩ শতাংশ হারে কাঁচা পাটের সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। স্বাধীনতার পরে এই হারে কোনও কৃষি পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়েনি। অনেকগুলি বিষয়ের উপরে নজর রেখে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঠিক করা হয়। এ বারেও তাই করা হয়েছে। রাজ্য সরকার চাইলে পাট চাষিদের অতিরিক্ত দাম দিতে পারেন।”
কিন্তু পাট চাষিরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, চাষের খরচ উঠছে না। লাভের গুড় খেয়ে নিচ্ছেন মজুতদারেরা। প্রতি বছরই পাট ছেড়ে অন্য চাষে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। প্রতি বছরই কৃষি মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা সিএসিপি কুইন্ট্যাল প্রতি কাঁচা পাট বিক্রির ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে। উদ্দেশ্য, চাষিকে যাতে কম দামে কোনও ভাবেই বিক্রি করতে না হয়। চলতি বছরে ধরা হয়েছে ২৪০০ টাকা। গত বছরের তুলনায় তা ১৫ শতাংশ বেশি। চাষিদের অভিযোগ, খোলা বাজারে দামের তুলনায় সরকারি সহায়ক মূল্য খুবই কম। এক কুইন্ট্যাল পাট উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ৩১৭৮ টাকা। ঘোষিত সহায়ক মূল্যের চেয়ে খরচ ৭৭৮ টাকা বেশি। তবে শিল্প মহলের খবর, চাষিকে এই ক্ষতি স্বীকার করতে হত না যদি তাঁরা খোলা বাজারের দাম পেতেন। খোলা বাজারে পাটের দাম চড়েছে প্রায় ৪০০০ টাকা। কিন্তু সেই সুবিধা পাচ্ছেন মজুতদারেরা। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ব্লকের পাট চাষি নসরত শেখ বলেন, “আমার পাঁচ বিঘা জমিতে প্রতি বছরই পাট চাষ করি। কিন্তু খরচ বাড়লেও দাম সেভাবে বাড়েনি। সরকার আমাদের কথা শুনছে না। পাটের দাম না বাড়ালে চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.