জেলায় কলেজ নির্বাচনের দিন ঠিক হওয়ার পরই কলেজগুলিতে চলছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পালা। আর এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে ছাত্র সংঘর্ষ। বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও সেই সংঘর্ষে বিরতি পড়েনি। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে নদিয়ার হরিণঘাটা কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় বোমাবাজিরও অভিযোগ উঠেছে ওই ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। ঘটনায় জখম হয়েছেন দুই ছাত্র। এই ঘটনার জেরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারার অভিযোগ তুলেছে এসএফআই। জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৮ জানুয়ারি জেলার অন্যান্য কলেজের মতোই হরিণঘাটা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। বুধ ও বৃহস্পতিবার ছিল এই কলেজের ৪২ আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন। এ নিয়ে প্রথম থেকেই চাপা উত্তেজনা ছিল কলেজে। অভিযোগ, এ দিন দুপুরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একদল ছাত্র মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে তাদের বাধা দেয় তাদেরই অন্য একদল কর্মী। সেই সময় গণ্ডগোলের সূত্রপাত। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন, “আমাদের নিজেদের মধ্যেই সামান্য গন্ডগোল হয়েছে। তা আমরা বসে মিটিয়ে নেব। তবে বোমাবাজির অভিযোগ ঠিক নয়।” এসএফআই-এর জেলা সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, “আমাদের ছেলেরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু কলেজে তৃণমূলের তাণ্ডব দেখে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি।” এই প্রসঙ্গে অয়নবাবু বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে এসএফআইয়ের মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার কোনও কারণ নেই। আসলে ওদের সঙ্গে কোনও পড়ুয়াই নেই।” কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবী দে (মিত্র) বলেন, “কলেজের মধ্যে কোনও গণ্ডগোল হয়নি। বাইরে কিছু হলে বলতে পারব না। তবে মনোনয় পত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি।” |
অন্য দিকে, এ দিনই মনোনয়নপত্র জমা দিতে কলেজে ঢোকার সময় এসএফআই সমর্থকদের মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার মাজদিয়া সুধীরঞ্জন লাহিড়ি কলেজের ঘটনা। তবে এ বিষয়ে কোনও পক্ষই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ছিল কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রথম দিন। প্রথম দিকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে কলেজে ঢোকে। তার কিছু পরেই কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসে এসএফআই-এর প্রার্থীরা। অভিযোগ, এই সময়ই তাদের উপর চড়াও হয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েকজন সমর্থক। এসএফআই-এর জেল সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, “হার নিশ্চিত বুঝতে পেরে টিএমসিপি এর গুন্ডা বাহিনী আমাদের প্রার্থীদের মেরে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে। জেলার অন্যান্য কলেজের মতো এই কলেজেও ওরা আমাদের কাউকে প্রার্থী হতে দেবে না বলেই এভাবে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন, “এসএফআই প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে এই সব অজুহাত দিচ্ছে।”
কলেজের অধ্যক্ষ সরজেন্দ্রনাথ কর বলেন, “কিছু প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আর বাইরে না বেরিয়ে কলেজে ভিতরে থেকে গিয়েছিল। আরও একদল মনোনয়নপত্র জমা দিতে কলেজের ভিতরে ঢুকলে তাদের সঙ্গে তাদের সঙ্গে গন্ডগোল হয় বলে শুনেছি।” কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ৫৪টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। |
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলের জেরে ১২ ঘণ্টার করিমপুর বন্ধের ডাক দিল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার দুপুরে করিমপুর পান্নাদেবী কলেজে ওই ঘটনার পর প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক করিমপুর বাজারে কৃষ্ণনগর করিমপুর রাজ্য সড়ক অবরোধও করে তারা। করিমপুর ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি তারখ সরখেলের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল বহিরাগত গুণ্ডা ও পুলিশকে নিয়ে আমাদের ছেলেদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়। লাঠি নিয়ে তাড়া করে, মারধরও করে। বাধ্য হয়ে এদিন বিকেলে আমরা পথে বসেছি আর ওই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ব্লক কংগ্রেসের পক্ষ থেকে করিমপুর বন্ধ ডেকেছি।’’ যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ওই ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি চিররঞ্জন মণ্ডল বলেন, “ওরা বুঝতে পেরেছ নির্বাচন হলে করিমপুর কলেজ থেকে ছাত্র পরিষদ মুছে যাবে। ফলে এ দিন ওই নাটক করেছে।” কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হক বলেন, “এদিন সকালে একটি পক্ষের ছাত্রদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা ছিল। অন্য পক্ষের দুপুরে জমা দেওয়ার কথা ছিল। প্রথমে মনোনয়নপত্র জমা পড়লেও দুপুরে কেউ আসেনি।’’ গণ্ডগোল নিয়ে তার বক্তব্য, ‘‘ কলেজ চত্বরে কোনও গণ্ডগোল হয়নি। বাইরে কিছু হলে, আমার জানা নেই।”
|
মাজদিয়া কলেজে ছবিগুলি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য। |