ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ছোট ছেলের ফোন পেয়েছিলেন বাবা। বছর ছাব্বিশের ছেলে বলেছিল, “গাড়ি খালে পড়ে গিয়েছে। মা-দাদা গাড়ির ভিতরে। আমি কোনও মতে বেরিয়েছি। তোমরা তাড়াতাড়ি এসো।” ফোন পেয়ে পাটুলির এনএসসি বোস রোডের বাসিন্দা স্বপন দাস ঘন কুয়াশার মধ্যে ট্যাক্সি চেপে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বাসন্তী হাইওয়ের কয়লা ডিপো এলাকায় পৌঁছে তিনি জানতে পারেন, স্থানীয় লোকজন গাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী শুভ্রা (৪৯) ও বড় ছেলে সৌরভের (৩১) মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন ছোট ছেলে সৌমিক। আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এগারো দিন পরেই সৌরভের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বসিরহাটের কিছু আত্মীয়কে বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে বৃহস্পতিবার ভোরে নিজেদের গাড়িতে চেপে দুই ছেলেকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন শুভ্রাদেবী। সৌমিক পুলিশকে জানান, গাড়ির পিছনের সিটে বসেছিলেন শুভ্রাদেবী ও সৌরভ। ঘন কুয়াশার মধ্যে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি। বাসন্তী হাইওয়ের ওই বাঁকের মুখে এসে সৌমিক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। রাস্তার পাশের কংক্রিটের বোল্ডারে ধাক্কা মেরে গাড়িটি ছিটকে ঘুসিঘাটা খালে গিয়ে পড়ে। গাড়িটিতে ‘সেন্ট্রাল লক’ ছিল। |
তদন্তকারীদের অনুমান, এ জন্যই পিছনের সিটে বসে থাকা শুভ্রাদেবী ও সৌরভ দরজা খুলে বেরোতে পারেননি। সৌমিক নিজে কোনও ভাবে দরজা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়িতে ফোন করেন। তখন কয়েক জন সব্জি-বিক্রেতা ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সৌমিক প্রথমে তাঁদের ঘটনাটি জানান। তাঁদের মাধ্যেমেই খবর যায় তিলজলা থানা এলাকার ট্রাফিক পুলিশের কাছে। পরে দমকল ও ব্রেক ডাউন ভ্যান এনে গাড়িটি তোলা হয়। শুভ্রাদেবী ও সৌরভকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মাসখানেক আগেই ওই এলাকায় আরও একটি গাড়ি একই ভাবে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। সেই বারেও দুই আরোহীর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, ওই বাঁকের মুখে বারবারই দুর্ঘটনা ঘটছে। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মাসখানেক আগেই ঘটনাস্থলের একটু আগে তিনটি স্পিড ব্রেকার তৈরি হয়েছে। খালের সামনে সিমেন্টের বোল্ডার ও লোহার স্তম্ভও বসানো হয়েছে। কিন্তু যে সব গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে, তাদের সব ক’টিই তীব্র গতিতে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বোল্ডার ভেঙে খালে গিয়ে পড়েছে। পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছেন, এ ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েও দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা রুখতে গেলে জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা চওড়া করতে হবে। এ নিয়ে পূর্ত দফতরের কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে বলে জানান পুলিশকর্তারা। |