ঘন জনবসতির ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে ঘরবাড়ি আর কলকারখানার ভিড়ে এক ফালি ফাঁকা জায়গা মেলাটাই এখন দুষ্কর। তার উপরে গঙ্গার ধার বরাবর বেশির ভাগ জায়গা জুড়েই চটকল। চড়ুইভাতির জায়গার চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় চটকল মালিকেরাও বিকল্প আয়ের উপায় হিসেবে চড়ুইভাতির জন্য জায়গা ভাড়া দেওয়া শুরু করেছেন।
শুধু শীতের মরসুমেই নয়, গঙ্গার ধারে মনোরম জায়গার সন্ধানে বছরভর মোটা টাকা খরচ করতেও রাজি থাকেন অনেকে। অনেকটা হাওয়া বদলের মতোই চটকলের ব্রিটিশ হাউসে দিন কয়েক কাটিয়ে আসার বিলাসিতা যাঁরা দেখান, তাঁদের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের এই চটকলগুলির শতাব্দী প্রাচীন ভাঙাচোরা অতিথি নিবাস সংস্কার করেছেন অনেক চটকল মালিক। ঘরের মধ্যে ফায়ার প্লেস, কাঠের সিঁড়ি, বিশালাকায় পিয়ানো বা হল ঘরের মাপে স্নানঘরে হাতির দাঁতের শাওয়ার এমন অনেক কিছুরই দেখা মেলে এই পুরনো অট্টালিকাগুলিতে। এমনিতেও চড়ুইভাতির জন্য অতিথি নিবাসের লন বা ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করতে দেওয়া হলেও শৌচাগার এবং বিশ্রামের জন্য দু’একটি ঘর সারিয়ে রেখেছেন অধিকাংশ চটকল কর্তৃপক্ষ। |
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একুশটি চটকলের মধ্যে এখন আঠারোটিই চালু। বন্ধ চটকলগুলিও শুধুমাত্র সংস্কারের খরচ তুলতে চড়ুইভাতির জন্য অতিথি নিবাস ভাড়া দেয়। এমনই একটি জগদ্দলের আলেকজান্ডার চটকলের কেয়ারটেকার বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘এক দিনের জন্য শুধু জায়গার ভাড়াই ন্যূনতম ৫-৭ হাজার টাকা হয়। তার উপরে আনুষঙ্গিক খরচ তো আছেই। এখানে তো আর শ্রমিকেরা কাজ করে না। পুরনো কর্মী যাঁরা আছেন, তাঁরাই টুকটাক ফাইফরমাস খেটে দেন। বিজয়বাবু জানান, শীতে চড়ুইভাতি হয়। এ ছাড়া, অন্য সময়ে অনেকে অতিথি নিবাস ভাড়া নেন। তাই কারখানার বেহাল অবস্থা হলেও অতিথি নিবাস এখনও সাজানো গোছানোই আছে।
চড়ুইভাতির চাহিদায় জোগান দিতে চাইছে পুরসভাগুলিও। ব্যারাকপুর পুরসভার গঙ্গার ধারে একফালি জায়গা আছে। সেখানে বিনোদন পার্ক ও অতিথি নিবাস-সহ ভাসমান হোটেল করারও পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। অবিলম্বে গাঁধীঘাটের কাছে ওই জায়গাটি সাজিয়ে-গুছিয়ে অন্তত চড়ুইভাতিটা চালু করতে চায় পুরসভা। নৈহাটি পুরসভা ইতিমধ্যেই গঙ্গার ধারে একটি বিনোদন পার্ক চালু করেছে হালিশহরেও টাউন হলের উল্টো দিকে একটি উদ্যান আছে পুরসভার। তবে এর মধ্যে একমাত্র কল্যাণী পুর এলাকাতেই চড়ুইভাতির জায়গা গঙ্গা থেকে বেশ কিছুটা দূরে। কিন্তু সেখানেও বিনোদন বাড়াতে তত্পর পুর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ করে কল্যাণী পুর এলাকাতেই চড়ুইভাতির জায়গা গঙ্গা থেকে বেশ কিছুটা দূরে। কিন্তু সেখানেও বিনোদন বাড়াতে তত্পর পুর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ করে কল্যাণী লেক পার্ককে অত্যাধুনিক বিনোদন পার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেশ রায়চৌধুরী বলেন, “কল্যাণীতে চড়ুইভাতির জায়গা মূলত দু’টি পিকনিক গার্ডেন আর লেক পার্ক প্রতিদিন চড়ুইভাতির জন্য যে হারে ভিড় হয়, তাতে বিনোদনের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।” লাইট অ্যান্ড সাউন্ড, লেজার শো, রোপওয়ে এমন অনেক কিছুই থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। লেকও সংস্কার করা হচ্ছে।
চড়ুইভাতির চাহিদাই ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে দুই শিল্পাঞ্চলের বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি। |