সন্দেশখালির কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের একজন ওই কলেজেরই ছাত্র। তাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের রয়েছে। কিন্তু ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি বৃহস্পতিবারেও।
আসন্ন কলেজ ভোটে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রার্থী পরেশ মণ্ডল সন্দেশখালির কালীনগর কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বুধবার তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার এবং তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, এসএফআই সমর্থকদের ধাক্কাতেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় পরেশের। পরেশের দাদা তাপস এফএফআইয়ের বিরুদ্ধে ভাইকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন থানায়। তবে, তা কারও নামে করেননি। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে অবশ্য তৃণমূল এই মৃত্যুকে নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করে।
বুধবার রাতে খুনের অভিযোগে পুলিশ ছোট সেহেরা গ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব দাস এবং ন্যাজাটের সুশান্ত মল্লিককে গ্রেফতার করে। বাসুদেব ওই কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সুশান্ত প্রাক্তন ছাত্র। দু’জনেই এসএফআই কর্মী। তাঁদের বিরুদ্ধে ৩০২ (খুন) এবং ৩৪ (সংগঠিত অপরাধ) ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বসিরহাট আদালতের বিচারক তাদের চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কিন্তু পরেশের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা আরও ঘন হচ্ছে।
বুধবারই ওই কলেজের কিছু ছাত্রছাত্রী জানিয়েছিলেন, সে দিন কলেজের গেটের সামনে কোনও গোলমাল হয়নি। কলেজ-লাগোয়া এলাকার এক ব্যবসায়ীও বৃহস্পতিবার বলেন, “আমি কাজের সূত্রে বুধবার সারা দিনই কলেজের সামনে ছিলাম। মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন থাকায় ২০-২৫ জন পুলিশকর্মীও ছিলেন। কোনও গোলমাল দেখিনি।” কলেজের সামনে কোনও গোলমাল হলে পুলিশের যে মামলা দায়ের করার কথা, তা-ও এ দিন পর্যন্ত হয়নি।
পরেশের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার কলেজে পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন নস্কর বলেন, “কলেজে কর্মীদের অনেকেই এ দিন আসেননি। ক্যামেরা ফুটেজ দেখা হয়নি। তাই বুধবার কলেজের গেটের সামনে কোনও গোলমাল হয়েছে কি না, বলতে পারব না।” এর ফলে বুধবার পরেশ আদৌ কলেজের সামনে এসেছিলেন কি না, তা নিয়ে ধন্দ কাটছে না।
প্রতিবেশীরাও পরেশের প্রহৃত হওয়ার ঘটনার কথা জানেন না। তার বাড়ি নিত্যবেড়িয়া গ্রামে, সেখানে টুসু মেলা চলছে। পরেশের পড়শি পিনাকী দাস এবং কমলা দাস বলেন, “মঙ্গলবার সারারাত মেলায় পরেশ অন্যদের সঙ্গে আনন্দ করেছিল। পরের দিন বেলায় খেতে বসে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা গ্রামের এক চিকিৎসককে নিয়ে যাই। তিনি মাথার যন্ত্রণার কয়েকটি ট্যাবলেট দেন। এরপর ওকে নিয়ে যাই ঘোষপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।”
ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সৌমিক রায়। তিনি বলেন, “পৌনে ১২টা নাগাদ ওই ছাত্রকে আনা হয়। তখন ও প্রায় অচৈতন্য, রক্তচাপ কম ছিল। ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন দেওয়া হয়। দেখেই মনে হচ্ছিল শরীরের ভিতরে কোনও অস্বস্তি হচ্ছে। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ওঁকে বসিরহাট হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি।” হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান পরেশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা থেকে আনার পরে ওই ছাত্রের দেহ কলেজ এবং কালীনগরে তৃণমূলের কার্যালয় হয়ে শ্মশানে দাহ করা হয়। তবে, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়না-তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি। বসিরহাট হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল আচার্য চৌধুরী জানিয়েছেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মুখবন্ধ খামে।
তা হলে কীসের ভিত্তিতে সরাসরি খুনের অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হল? তা নিয়ে পুলিশ সুপার কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে এর বেশি কিছু বলা যাবে না।” |