দেহ নিয়ে মিছিলের পথে এ বার শাসক দলও
রদেহ নিয়ে মিছিলের পথে হাঁটল শাসক দল তৃণমূলও।
কালীনগর কলেজের ছাত্র পরেশ মণ্ডলের মরদেহ নিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতার রাজপথে মিছিল করল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি। দু’সপ্তাহ আগে মধ্যমগ্রামের নির্যাতিতা কিশোরীর দেহ নিয়ে সিটুর শোকমিছিলের পরে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র মন্তব্য করেছিলেন, “মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতিও অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা।” তার রেশ ফুরনোর আগেই এ দিন শাসক দলের মিছিল। স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা পাল্টা সরব হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এ বার মুখ্যসচিব চুপ কেন?
সন্দেশখালির মৃত ছাত্র পরেশ মণ্ডলের দেহ নিয়ে এ দিন দুপুরে মধ্য কলকাতার রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের পিস হেভ্ন থেকে ময়দানের গাঁধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত মৃতদেহ নিয়ে মিছিলে সামিল হয়েছিলেন তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রী, বিধায়ক এবং ছাত্রনেতা। মিছিলের শুরুতে হাজির ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁরা অবশ্য দেহ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পরেশ মণ্ডলের দেহ নিয়ে মিছিলে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী।
কালীনগর কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পরেশ টিএমসিপি প্রার্থী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে মতান্তর থাকলেও এসএফআইয়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছে টিএমসিপি। গ্রেফতারও করা হয়েছে দুই এসএফআই সমর্থককে। অসুস্থতাজনিত কারণে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে, না সংঘর্ষে, এই প্রশ্নে শাসক দলের মধ্যে থেকেই একাধিক মত প্রকাশ্যে এসেছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পার্থবাবু এ দিন এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছিল। কিন্তু এসএফআই তখন হত্যার অভিযোগ এনেছিল। কালীনগরে এসএফআইয়ের দিকে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। তখন বোঝা যাবে।”
বাম নেতৃত্বের আবার পাল্টা বক্তব্য, ঘটনার তদন্তকে এক দিকে ‘প্রভাবিত’ করে অন্য দিকে মরদেহ নিয়ে মিছিল করে এসএফআইকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা হচ্ছে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কথায়, “ওঁরা ক্ষমতায় আসার আগেও দেহ নিয়ে রাজনীতি করেছেন, এখনও করছেন! ছেলেটির হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা ছিল। তা থেকেই তার মৃত্যু হয়েছে। অথচ বিকৃত তথ্য মানুষের কাছে পেশ করা হচ্ছে!” একই ভাবে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, “নিজেরা গোলমাল করে অন্যদের ফাঁসানো ফ্যাসিস্ত কায়দা! ওই ছেলেটি সংঘর্ষে মারা যায়নি। অথচ মিথ্যা অভিযোগে এসএফআইয়ের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেহ নিয়ে মিছিল করেও এসএফআইকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে! ময়না তদন্তের সঠিক রিপোর্ট চেপে দেওয়া হচ্ছে কেন?”
মধ্যমগ্রামের ক্ষেত্রে শ্যামলবাবুদের বিরুদ্ধে দেহ-রাজনীতির অভিযোগ করেছিলেন পার্থবাবুরা। শ্যামলবাবুর বক্তব্য “মধ্যমগ্রামের ঘটনা নিয়ে মুখ্যসচিবের মন্তব্যে কার্যত রাজ্য প্রশাসনের দিকেই ইঙ্গিত ছিল। কারণ, পরিবারের লোকের অমতে পুলিশই মৃতদেহ জোর করে দাহ করতে নিয়ে গিয়েছিল। পুলিশের ওই আচরণের সময় আমরা ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।” তাঁদের আরও বক্তব্য, মধ্যমগ্রামের মেয়েটি মারা গিয়েছিল কলকাতার হাসপাতালে। শহরেরই শ্মশানে তার শেষকৃত্য হওয়ার কথা ছিল। পক্ষান্তরে, কালীনগরের ছাত্রের দেহ সন্দেশখালি থেকে এনে কলকাতায় মিছিলে ঘুরে আবার সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে!
আগে সিটুর দিকে আঙুল তুলে এখন তৃণমূলকেও একই রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেল কেন? পার্থবাবুর জবাব, “কলেজ নির্বাচনের সময় ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে তার মরদেহ গাঁধীমূর্তিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দেহ নিয়ে রাজনীতি করা হয়নি।”
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার দাবি, “মৃতদেহ নিয়ে কোনও মিছিল করা হয়নি। এটা দলীয় কর্মসূচির মধ্যেই পড়ে। দলের কোনও কর্মীর মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য দেহ গাঁধী মূর্তিতে রাখা হয়।” অথচ পিস হাভ্ন থেকে মিছিলের শুরুতে এ দিন টিএমসিপি-র উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় এবং অন্য নেতাদের পাশেই দেখা গিয়েছে শঙ্কুকে!
সংঘর্ষ এবং তার জেরে মৃত্যুতে তাদের জড়িত থাকার কথা গোড়া থেকেই অস্বীকার করে আসছে এসএফআই। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস এ দিনও বলেছেন, “আমি যত দূর জানি, ছেলেটি শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিল। সে কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।” তাঁর কথায়,“ তবু এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে, দোষীদের শাস্তি যা হওয়ার হবে। কিন্তু অভিযোগ মিথ্যা হলে, যাঁরা ওই মিথ্যা বলছেন, তাঁদের শাস্তি কী হবে?”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.