|
|
|
|
প্রধান শিক্ষক নেই দু’শোরও বেশি স্কুলে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি |
একটা-দু’টো নয়, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দু’শোরও বেশি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই এখন। কোথাও-কোথাও এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সম্প্রতি এই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী-সহ স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন স্কুলগুলির তালিকা চায়। মামুদ হোসেন জানিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী নন্দীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে স্কুলগুলির তালিকা তৈরি করে স্কুল সার্ভিস কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী নন্দী বলেন, “প্রধান শিক্ষক নেই এমন স্কুলগুলির মধ্যে কতগুলি প্রধানশিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছে এবং কতগুলি স্কুল আবেদন জানায়নিতার তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৬৬৬টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ও ২৩টি মাদ্রাসা ও হাই মাদ্রাসা স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ২১৪টি স্কুলে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে রয়েছে। শুধু কাঁথি ও এগরা মহকুমারই ৯১টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। স্কুলগুলি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। এই অবস্থা কেন?
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনগুলি মনে করছে, এই অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলের পরিচালন সমিতিই মূলত দায়ী। তারা প্রধান শিক্ষকের জন্য স্কুল পরিদর্শকের অফিসে দরবার না করায় বিষয়টি ধামাচাপা থাকে। ওয়েস্ট বেঙ্গল হেড মাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাঁথি ও এগরা মহকুমা শাখার সভাপতি তথা কাঁথি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরূপকুমার দাস বলেন, “বেশ কিছু স্কুলের পরিচালন সমিতি নিজেদের স্বার্থে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই স্কুল চালাচ্ছেন। স্কুলে একজন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত থাকলে পরিচালন সমিতি তাঁর উপর ততটা প্রভাব খাটাতে পারে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকলে চাপ দেওয়া সহজ হয়। বিরোধিতা করলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বদলে ফেলারও ক্ষমতা রয়েছে পরিচালন সমিতির হাতে। প্রধান শিক্ষক থাকলে সে সুযোগ নেই।” নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির কাঁথি মহকুমা শাখার সম্পাদক তথা কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষাসদনের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত রায়ও মনে করেন, “প্রভাব খর্ব হবে বলেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনেক পরিচালন সমিতি অনীহা প্রকাশ করে থাকেন।’’ করঞ্জি সুভাষ বিদ্যাভবনের পরিচালন সমিতির সম্পাদক নন্দগোপাল পাত্র আবার বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের জন্য জেলা বিদ্যলয় পরিদর্শকের অফিস থেকে অনুমোদনটুকুও নেওয়া হয় না। কারণ ওই অনুমোদন নেওয়ার সময় শূন্যপদের উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক চাওয়ার আবেদন জানাতে হয়।”
তবে, শুধু পরিচালন সমিতিকে দোষ দিতে নারাজ স্যাগাসিয়াস টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সহ-সম্পাদক তথা নিমতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু সরকার। তাঁর বক্তব্য, “বেশ কিছু স্কুলের পরিচালন সমিতি দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল সার্ভিস কমিশনে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন জানাচ্ছে। সার্ভিস কমিশনই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করতে পারেননি।”
কারণ যা-ই হোক না কেন, স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকাটা যে আবশ্যিক, তা নিয়ে দ্বিমত নেই কারও। স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক যতটা কড়া হতে পারেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে ততটা কড়া পদক্ষেপ করা সম্ভব হয় না। এই সিদ্ধান্তহীনতার ফল ভুগতে হয় স্কুলগুলিকেই। |
|
|
|
|
|