|
|
|
|
তিন বছর পর বাড়ি তৈরির সম্পূর্ণ বরাদ্দ
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বাড়ি নির্মাণের টাকায় কেউ মোটরবাইক কিনেছিলেন। আবার কেউ দিয়েছিলেন মেয়ের বিয়ে। ফলে বরাদ্দ অর্থ খরচের হিসেবও দিতে পারেনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। আর তারই জেরে পরপর তিন বছর সম্পূর্ণ বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে জেলা। তিন বছর পর ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে নতুন করে ফের ইন্দিরা আবাস যোজনায় বরাদ্দ মিলল। পুনরায় খরচ করতে না পারার কারণে যাতে জেলা বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “দ্রুত গতিতে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে সময়ের মধ্যে শেষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ শুরু করা হয়েছে।”
মাওবাদী উপদ্রুত ও পিছিয়ে পড়া জেলা হওয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে এবার বাড়ি তৈরির বরাদ্দ বেড়েছে। এবার বাড়ি প্রতি ৪৮ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৭৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৫৮০৫টি বাড়ি তৈরির জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র সরকার। যার প্রথম কিস্তির ৪৬ কোটি ২২ লক্ষ টাকাও পেয়ে গিয়েছে জেলা। বাড়ি নির্মাণের টাকা যাতে নয়ছয় না হয় সে জন্যও বেশ কয়েকটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগে যেখানে দুই কিস্তিতে বাড়ি তৈরির টাকা মিলত, সেখানে এবার তিন কিস্তিতে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে ২৫ শতাংশের বেশি টাকা দেওয়া হবে না, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬০ শতাংশ ও তৃতীয় কিস্তিতে ১৫ শতাংশ করে টাকা দেওয়া হবে। প্রতিটি কিস্তিতে টাকা দেওয়ার আগে অবশ্যই সেই টাকায় কী কাজ হয়েছে, তার খরচের হিসাব আওয়াস সফট ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে প্রতিটি কিস্তির টাকায় হওয়া তৈরি বাড়ির ছবিও। যাতে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারও দেখে নিতে পারে বরাদ্দ অর্থে কাজ কতটা হচ্ছে। তাছাড়া যে উপভোক্তাদের বাড়ি দেওয়া হবে তাঁদের সচেতনতার জন্য কর্মশালাও আয়োজন করতে হবে। কর্মশালায় উপভোক্তাদের বোঝানো হবে কেন সরকার বাড়ি তৈরির জন্য অর্থ দিচ্ছে, বাড়িটি দেখতে কেমন হবে। এমনকী উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ নামের তালিকাও আপলোড করতে হবে ওই ওয়েবসাইটে। এ সবের জন্যও এবার ৪ শতাংশ খরচ দিচ্ছে সরকার। আগে এই সব কাজের জন্য কোনও ব্যয় ধরা হত না।
২০১০-১১ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে বরাদ্দের প্রথম কিস্তির অর্থাৎ অর্ধেক টাকা পেয়েছিল জেলা। কিন্তু জেলা সেই টাকা খরচের হিসাব দিতে না পারায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেলেনি। ২০১১-১২ আর্থিক বছরেও ফের ২২ হাজার বাড়ি তৈরির অনুমোদন মেলে। প্রথম কিস্তির প্রায় ২৭ কোটি টাকাও পেয়েছিল জেলা। কিন্তু খরচের হিসাব না দিতে পারায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেলেনি। পরপর দু’বছর খরচের হিসাব না দিতে পারায় ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে কোনও টাকাই পায়নি জেলা। প্রশ্ন হল, জেলা কেন বারবার বরাদ্দ অর্থ খরচের হিসেব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য টাকা নিয়ে কেউ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, কেউ মোটরবাইক কিনেছেন, ফলে খরচের হিসাবও দেওয়া যায়নি। এতদিন এ নিয়ে কেউ মাথাও ঘামাননি। সম্প্রতি বাড়ি তৈরির টাকা নিয়ে বাড়ি না বানিয়ে টাকা অন্যকাজে খরচ করার অভিযোগে কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। আর যে সব ব্লকে আগের টাকা পড়ে রয়েছে সেই টাকায় নতুন করে কাজ শুরু না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ব্লকগুলিকে। সেই টাকা থেকে কিছু উপভোক্তাকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দিয়ে ঘরের কাজ সম্পূর্ণ করতে বলা হয়েছে। জেলা পরিষদ জানিয়েছে, বর্তমানে এখনও কিছু উপভোক্তা রয়েছেন যাঁদের বাড়ি তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। যে ব্লক কাজ শুরু করেনি, সেই সব ব্লক থেকে টাকা ফেরৎ চাওয়া হচ্ছে। তা দিয়ে কাজ সম্পূর্ণ করা হচ্ছে।
শুধু বাড়ি নির্মাণ নয়, তার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট উপভোক্তার বাড়িতে শৌচাগার তৈরি, বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া, প্রকল্পের উপভোক্তাদের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার আওতায় নিয়ে আসা, এক সঙ্গে একটি জায়গায় একাধিক বাড়ি তৈরি হলে সেখানে একশো দিনের প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণ, জমি সমতলীকরণ করা-সহ যাবতীয় কাজ করতে এই প্রকল্পের সঙ্গে বাকি প্রকল্পগুলির সমন্বয় সাধন করতেও উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ গ্রামবাসীর পক্ষে এই ধরনের সুবিধে পেতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমরা সমস্ত পরিষেবা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছি।” |
|
|
|
|
|