বিরোধী-হীন কলেজে শুধু টিএমসিপি
ভোটের আগেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে আসা নিশ্চিত করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কলেজের ছাত্র সংসদেও সেই একই ছবি। ভোটের আগেই চালকের আসনে টিএমসিপি।
পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ২৪টি কলেজ রয়েছে। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন-পর্ব শেষের পর দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে ১৩টি কলেজে বিরোধী প্রার্থীই নেই। শুধু টিএমসিপির কর্মী-সমর্থকেরাই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। অন্য দিকে, বাকি যে ১১টি কলেজে বিরোধী প্রার্থী রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৫টি কলেজে টিএমসিপিকে লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হবে। বাকি ৬টি কলেজের ছাত্র সংসদে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতায় আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ, ওই কলেজগুলিতে নামমাত্র আসনে বিরোধী প্রার্থী রয়েছেন। ঠিক একই ছবি পূর্ব মেদিনীপুরে। পূর্বের ১৬টি কলেজের মধ্যে কোনওটিতেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি এসএফআই। তিনটি কলেজের কয়েকটি আসনে ডিএসও প্রার্থী দিয়েছে শুধু। ফলে বাকি ১৩টি কলেজে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্রসংসদ দখল করতে চলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ডিএসও পালপাড়া কলেজে ৪টি, কাঁথি কলেজে ৫টি ও তমলুক কলেজে ৬টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে মাত্র। ফলে ওই কলেজগুলিও শেষ পর্যন্ত যে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের হাতে থাকবে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।

মনোনয়ন জমা ঘিরে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর কলেজে টিএমসিপি-এর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতি।
বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো একযোগে সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছে। তাদের দাবি, কলেজ ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশই নেই। বস্তুত, বৃহস্পতিবারও মেদিনীপুর, খড়্গপুরের মতো কয়েক’টি কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েকজন জখম হয়েছেন। মেদিনীপুরে আবার টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়েছে। অন্য দিকে, খড়্গপুরে বিরোধী-শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। বিরোধীদের বক্তব্য, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সন্ত্রাসের জন্যই অধিকাংশ কলেজে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। বিরোধী-শিবিরের দাবি উড়িয়ে দিয়ে টিএমসিপির দাবি, প্রার্থী খুঁজে না-পেয়েই বিরোধীরা অপপ্রচার করছে। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও অশান্তির অভিযোগ খারিজ করেছেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “বৃহস্পতিবারও কোনও গোলমাল হয়নি। সব কিছু সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ বিভাগের প্রধান জয়ন্তকিশোর নন্দী বলেন, “মনোনয়ন-পর্ব নির্বিঘ্নে হয়েছে। গোলমালের কোনও খবর আসেনি।”
এক সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের কলেজগুলোতে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের যে দাপট ছিল, এখন টিএমসিপির সেই দাপটই চোখে পড়ছে। ওই দাপটে লালগড়ের জেলার জঙ্গলমহলে কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়েছে এসএফআই। পালাবদলের আগে ২০০৯ সালে জেলার ১৯টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ১৩টি দখল করে এসএফআই, ৩টি টিএমসিপি, ২টি ছাত্র পরিষদ এবং ১টি অন্যরা। ছবিটার বিশেষ হেরফের হয়নি ২০১০ সালে। ওই বছর ২০টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ১২টি দখল করে এসএফআই। ৪টি টিএমসিপি। ৩টি ছাত্র পরিষদ এবং ১টি অন্যরা। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১ সালে রাতারাতি ছবিটা বদলে যায়।
ওই বছর ২১টি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। এর মধ্যে মাত্র ২টি দখল করে এসএফআই, ১৬টি টিএমসিপি, ৩টি সিপি। গেল বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। এ বার টিএমসিপির সেই দাপটের ছবিই উঠে আসছে। আগামী ২৮ জানুয়ারি কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। মনোনয়নপত্র তোলা এবং জমা দেওয়ার জন্য দু’টি দিন নির্দিষ্ট ছিল। বুধ এবং বৃহস্পতিবার। এক-দুু’টি কলেজে অবশ্য শুক্রবারও মনোনয়ন-পর্ব চলবে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনোনয়ন ঘিরে চাপা উত্তেজনা ছিল মেদিনীপুর, খড়্গপুর, বেলদার মতো কয়েকটি কলেজে।
অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয়। তাও সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি। মেদিনীপুর কলেজে টিএমসিপির দুই গোষ্ঠী প্রার্থী দিয়েছে। ৯৪টি আসনে সব মিলিয়ে প্রার্থী রয়েছেন ১৫৩ জন। ১টি আসনে আবার কোনও সংগঠনই প্রার্থী দিতে পারেনি। বেলদা কলেজেও টিএমসিপির দুই গোষ্ঠী প্রার্থী দিয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কলেজের বাইরে পুলিশের পাহারা।
গেল বার মেদিনীপুর কমার্স কলেজ এবং সবং কলেজের ছাত্র সংসদ একক ভাবে দখল করেছিল ছাত্র পরিষদ। মনোনয়ন-পর্বে এ বারও এই দুই কলেজে দাপট দেখিয়েছে সিপি। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, দাঁতন, সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর, চন্দ্রকোনা, শিলদা, মানিকপাড়া, নাড়াজোল, কেশপুর, পিংলা, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ, গড়বেতা, ঘাটাল-সহ ১৩টি কলেজে বিরোধী প্রার্থীই নেই। অন্য দিকে, বাকি যে ১১টি কলেজে বিরোধী প্রার্থী রয়েছে, তার মধ্যে খড়্গপুর, হিজলি, চাঁইপাট, সবং, মেদিনীপুর কমার্স কলেজে টিএমসিপিকে লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হবে। গোয়ালতোড়, মেদিনীপুর মহিলা কলেজ-সহ বাকি ৬টি কলেজের ছাত্র সংসদে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতায় আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬টি কলেজে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার দিন ছিল ১৫, ১৬ জানুয়ারি। শনিবার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের দিন। ওই দিনই প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। নির্বাচন হওয়ার কথা ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু সেই ভোট হওয়ার আগেই দেখা গেল কলেজগুলি সব টিএমসিপি-র দখলে চলে গিয়েছে।
কেন এই পরিস্থিতি? পূর্ব মেদিনীপুরে এসএইআইয়ের জেলা সম্পাদক পরিতোষ পট্টনায়েক বলেন, “আমরা ১১টি কলেজে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাধা ও কলেজ কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আমরা অভিযোগ করিনি। তা হলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাত আমাদেরই।” এই অবস্থায় আলাদা করে কলেজে-কলেজে প্রতীকি ছাত্রসংসদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসএফআই। এসএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “ছাত্রভোটের নামে প্রহসন হচ্ছে। মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ সব কী অবাধ ভোটের নমুনা?”
এরই মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু কলেজে প্রার্থী দিয়েছে ডিএসও। সংগঠনের জেলা সম্পাদক চিন্ময় ঘোড়ই বলেন, “গণতন্ত্রের নামে এটা প্রহসন। কলেজে-কলেজে আমাদের সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। বুধবার আমাদের কয়েকজন প্রার্থীকে মারধর করার ঘটনায় পাঁশকুড়া থানায় টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ”
যদিও কোনও অভিযোগই আমল দেননি পূর্বে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি দীপক দাস। তিনি বলেন, “এসএফআই, ডিএসও-সহ বিরোধী সংগঠনগুলি তাদের হয়ে প্রার্থী খুঁজে পায়নি। তাই মিথ্যে অভিযোগ করে মুখরক্ষার চেষ্টা করছে।”

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.