ওড়েনি কপ্টার, গাড়িতেই দশগ্রামে
কাল থেকেই সাজ সাজ রব। দশটা বাজতেই রাস্তায় ভিড় জমতে শুরু করল। ১০টা ২০ মিনিটেই যে রাজ্যপালের হেলিকপ্টার নামার কথা।
ক্রমে ঘড়ির কাঁটা সাড়ে দশটা ছুঁল। কোথায় কী? আকাশে তখনও ঘন কুয়াশা। হেলিকপ্টারের নামগন্ধ নেই। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন পুলিশকর্মী আকাশে তাঁকিয়ে কপ্টার খুঁজছেন। মানুষজনও ভাবছেন, এ বার হয়তো কপ্টার আসবে।
বসন্তপুর ঝাড়েশ্বর বাণীমন্দিরের মাঠে যেখানে রাজ্যপালের কপ্টারের জন্য হেলিপ্যাড বানানো হয়েছে, সেখানে তখন হাজির পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি, খড়্গপুরের মহকুমাশাসক আর বিমলা। চারদিক কড়া নিরাপত্তায় মোড়া। এমন সময় সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বললেন, “খারাপ আবহাওয়ার কারনে কপ্টার উড়তে পারবে না।”
তবে কি রাজ্যপাল আসবেন না? এলাকায় তখন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেল, রাজ্যপালের নানা কর্মসূচি থাকায় গাড়িতে আসতে বেশি সময় লাগবে। তাই অন্য কোনওদিন অনুষ্ঠান হলে তাঁরা আসা সহজ হয়। তবে এ দিন আসা কঠিন। মুহূর্তের মধ্যে খবরটা ছড়িয়ে পড়ল।

রাজ্যপালের সঙ্গে খোশ মেজাজে বিধায়ক মানস ভুঁইয়া ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী।
যে বসন্তপুরে রাজ্যপালের কপ্টার নামার কথা, সেখান থেকে দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থ সাধিকা শিক্ষাসদনের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। দশগ্রামের এই স্কুলের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষেই আসার কথা রাজ্যপালের। তবে বসন্তপুর ঝাড়েশ্বর বাণীমন্দিরের ছাত্রছাত্রীরাও এই সুযোগে রাজ্যপালকে এক ঝলক দেখে নিতে আগ্রহী। সুযোগ পেলে ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানানোর প্রস্তুতিও নেই হয়েছে। দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশেও বেশ ভিড়। আর যে স্কুলে ৭৫ বর্ষপূর্তি, সেখানে থিকথিকে ভিড়। বিভিন্ন অতিথি, স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে অভিভাব সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। রাজ্যপাল নাও আসতে পারেন জেনে সকলেই ভেঙে পড়েন। চোখে-মুখে ধরা দেয় হতাশা।
এই ছবিটা অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের ঘোষণা, রাজ্যপাল আসবেন, তবে কপ্টারে নয় গাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে তোড়জোড় শুরু। আনন্দে ভাসছে গোট স্কুল। সকাল ১১টার পরিবর্তে বেলা ১২টায় শুরু হল অনুষ্ঠান। তখন আকাশ রোদ ঝলমলে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপাল বললেন, “আবহাওয়া খারাপ থাকায় সমস্যা হয়েছিল। না এলে সবার মন খারাপ হত ঠিকই। এখন আকাশ পরিষ্কার। আমিও অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুশি।”
প্রায় এক ঘন্টা সবংয়ের এই স্কুলে ছিলেন রাজ্যপাল। তিনি নিজে প্রায় ১২ মিনিট বক্তব্য রাখেন। মনে করিয়ে দেন, ব্যক্তি গঠনে, সমাজ গঠনে বিদ্যালয়ের অবিসংবাদী ভূমিকার কথা। রাজ্যপালের কথায়, “শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়েছে। সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা তো রয়েছেই। উচ্চশিক্ষাতেও যাতে সকলে সুযোগ পান তা দেখতে হবে।” রাজ্যপালের মতে, “সামাজিক অবক্ষয় রোধে স্কুলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা মানে কিছু তথ্য সংগ্রহ নয়। শিক্ষাই পারে দেশকে, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেত। একটি স্কুল থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক-সহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ তৈরি হন। ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শেখাতে হবে বিবেকানন্দের মানবতাবোধ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই জেলারই মানুষ। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, একাধারে সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক। নারীকে সম্মান জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা সব থেকে বেশি। ”

৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্কুল ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নেও জোর দেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, “পরিকাঠামো না থাকলে ভাল ছাত্র তৈরি সম্ভব নয়। তবে এই স্কুল ঘুরে দেখলাম, এখানে ভাল পরিকাঠামো রয়েছে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়ের কথাও একবার মনে করিয়ে দেন সকলকে। ফেরার সময় আর আবহাওয়া বাধা হয়নি। দুপুর দু’টো নাগাদ হেলিকপ্টারে চড়েই কলকাতা রওনা দেন রাজ্যপাল।
পেলিও নিয়ে বৈঠক: আগামী রবিবার পালস পেলিও কর্মসূচি রয়েছে। তা সফল করতে বুধবার মেদিনীপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠক হয়। ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৯৪ জনের টিকা নেওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্র রয়েছে ২, ৫৭৫টি। এ জন্য স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করবেন ১০, ৩০০ জন। সুপারভাইজার রয়েছেন ৮৯৮ জন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যরাই স্থানীয় কেন্দ্রে গিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। বৈঠকে ছিলেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড়, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) কবিতা মাইতি প্রমুখ।

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.