ভোট স্থগিত হয়ে গেল হুগলির তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা কলেজ এবং শ্রীরামপুর গার্লস কলেজে।
পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী নেই, এই কারণ দেখিয়ে চাঁপাডাঙা কলেজে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ওই মর্মে কলেজে নির্দেশও পাঠান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারার অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মেয়েরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বুধবার শ্রীরামপুর আদালত জানিয়েছে, ওই কলেজের ভোট আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে।
দু’টি কলেজেই আগামী ২৮ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। চাঁপাডাঙা কলেজ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক দেবকুমার পাঁজা বলেন, “ভোটে ওই কলেজে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। তার জন্য কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু পর্যাপ্ত পুলিশ মিলবে না বলে হুগলির জেলাশাসক আমাদের জানিয়েছেন। সেই কারণেই আপাতত ওই কলেজে ভোট স্থগিত রাখা হচ্ছে।” স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী রচপাল সিংহ ওই কলেজের সভাপতি। তিনি অবশ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রচপাল বলেন, “পর্যাপ্ত পুলিশ দেওয়াই যেত। কিন্তু তা না করে ভোট প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিয়ে প্রশাসন ঠিক করেনি। এতে অশান্তি বাড়বে বই কমবে না।”
কলেজ সূত্রের খবর, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর রেষারেষির জেরে সেখানে গোলমাল লেগেই আছে। ওই কলেজের সরকারি প্রতিনিধি ছিলেন পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান।
গত অক্টোবরের শেষে রাজ্য সরকার তাঁকে সরিয়ে ওই পদে রচপালের নাম প্রস্তাব করে পাঠায়। তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সমর্থক ছাত্রদের মধ্যে অশান্তি হয়। মারপিট, বোমাবাজি কিছুই বাদ থাকেনি। কলেজের ভিতর থেকে বোমাও উদ্ধার করে পুলিশ।
দিন কয়েক আগে রচপালের অনুগামী বলে পরিচিত এক তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। ওই ঘটনার নেপথ্যেও কলেজের রাজনীতি আছে বলে তৃণমূলের একটি শিবিরের খবর। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী না থাকলে সেখানে নির্বাচনকে ঘিরেও বড় ধরনের অশান্তি হতে পারে।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি শুভজিত্ সাউয়ের বক্তব্য, “ভোট স্থগিত করার বিষয়টি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। আমাদের কাজ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা। ওই কলেজে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলেই আমরা সেটাই করব।” পক্ষান্তরে, এসএফআই জেলা সহ-সম্পাদক অভিজিত্ বারুই বলেন, “ওই কলেজে দীর্ঘদিন ধরে নৈরাজ্য চলছে দুই বিধায়কের দ্বন্দ্বে। পরিস্থিতি প্রশাসন সামাল দিতেই পারছে না।”
অন্য দিকে, ডিএসও-র মেয়েরা মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেওয়ায় তা জমা দিতে পারেননি টিএমসিপি ছাত্রীরা। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে দিন কয়েক আগে সরগরম হয়ে ওঠে শ্রীরামপুর গার্লস কলেজ। টিএমসিপি-র তরফে নতুন করে মনোনয়নপত্র দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্তু নিয়ম না থাকায় সেই দাবি মানা হয়নি বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন।
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতৃত্ব। তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলেজে ভোট স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সব পক্ষকেই নতুন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। ডিএসও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
অন্য দিকে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারামারি বাধল হুগলির রিষড়ার বিধানচন্দ্র কলেজে। জখম হন কয়েক জন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৮ জানুয়ারি ওই কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন। এক দশকেরও বেশি সময় পরে সেখানে ভোট হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন। এ নিয়েই বিকেলে দু’পক্ষের গোলমাল বাধে। বেগতিক বুঝে কলেজ কর্তৃপক্ষ মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া বন্ধ করে দেন। পুলিশ ভিতরে ডাকা হয়।
ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করা শুরু করতেই তৃণমূলের বহিরাগতরা চড়াও হয়। মারধর করা হয় তাদের। ছাত্র পরিষদ নেতা ইমরান খান বলেন, “ওরা বাইরে থেকে লোক জড়ো করে এনেছিল। মহম্মদ আরমান নামে আমাদের প্রহৃত এক কর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় পুলিশ ভিতরে ছিল না।” জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি শুভজিত্ সাউ অবশ্য বলেন, “ওখানে তেমন কিছু হয়েছে বলে শুনিনি। শুক্রবার শেষ দিন আমাদের ছেলেমেয়েরা ওখানে মনোনয়নপত্র জমা দেবে।” |