ব্যস্ত দিনের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। সুবেশা তরুণী মোবাইলে কথা বলতে বলতেই রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। হঠাৎই প্রায় ঘাড়ের উপরে এসে ব্রেক কষল একটা ট্যাক্সি। একটু থমকে ফের ফোনে কথা বলতে বলতেই রাস্তার ওপারে চলে গেলেন ওই তরুণী।
এমন দৃশ্য তো আকছারই দেখা যায় শহরের রাস্তায়। তরুণীর জায়গায় কখনও থাকেন কলেজপড়ুয়া তরুণ, কখনও বা মাঝবয়সী চাকুরে। শুধু শহরের রাস্তাই নয়, শহরতলিতে এ ভাবে রেললাইন পেরোনোর দৃশ্যটাও মানুষের চোখ সয়ে গিয়েছে। বিপদ এড়ানোর হাজারো কথাতেও সতর্কতা যে বাড়েনি, তা-ও মেনে নিচ্ছেন রেলপুলিশের কর্তারা।
কলকাতা পুলিশের আইনে অবশ্য কানে মোবাইল নিয়ে রাস্তা পেরোলে কিংবা গাড়ি চালালে জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু ক’জন সেই জরিমানার ফাঁদে পড়েন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পুলিশের অন্দরেই। জরিমানার অঙ্কটাও বিরাট কিছু নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, কানে মোবাইল নিয়ে রাস্তা পেরোলে ১০ থেকে ৫০ টাকা জরিমানা হতে পারে। কিন্তু শহরের ব্যস্ত সময়ে হাতেগোনা কয়েক জন লোককেই এ ভাবে জরিমানা করা হয়। “কখনও কখনও সচেতনতা বাড়াতে ধরপাকড় হয়। না হলে ভিড়ের মধ্যে এ ভাবে জরিমানা করাও সম্ভব নয়।” মন্তব্য এক পুলিশকর্তার। |
কানে ধরা বিপদ। ছবি: দেবাশিস রায়। |
বস্তুত, জরিমানার পরিমাণ বাড়ালে কোনও লাভ হবে কি না, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। দীর্ঘদিন কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব সামলানো এক আইপিএসের মতে, জরিমানা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন বলবৎ করার উপরেও জোর দেওয়া উচিত।
এই প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর প্রসঙ্গ। বছর পাঁচেক আগে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য বেঙ্গালুরু পুলিশ বছরে প্রায় ১৭০০০ মামলা করত। সেখানে কলকাতা পুলিশের মামলার সংখ্যা ছিল শ’দুয়েক। পরে অবশ্য তৎপরতা বাড়িয়ে সেই মামলার সংখ্যা বেড়েছে। “এখানেও একই পথ মেনে চলা উচিত।” বলছেন ওই পুলিশকর্তা।
যদিও পুলিশেরই আর একটি অংশ মনে করে, জরিমানার থেকেও নাগরিকদের নিজেদের সচেতনতা তৈরি হওয়াটা অনেক বেশি প্রয়োজন। তা না হলে এত ভিড়ের শহরে পুলিশের পক্ষে প্রত্যেক পথচারীর দিকে নজর রাখা সম্ভব নয়।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয় মোবাইলে কথা বলতে বলতে কোনও মতেই রাস্তা পেরোবেন না। কারণ তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। মানুষ যদি সব জেনেশুনে সচেতনতাকে এড়িয়ে চলেন, তা হলে তাঁরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনবেন।” |