চাপের মুখে ইস্তফা বীরেন্দ্র পারখের
রে-বাইরে চাপের মুখে শেষমেশ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সাঁইথিয়ার তৃণমূল পুরপ্রধান বীরেন্দ্রকুমার পারখ। বৃহস্পতিবার মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরীর কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। সাঁইথিয়ায় গত সাড়ে ৪ বছর ধরে পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলানো বীরেন্দ্রবাবু মুখে ‘শারীরিক অসুস্থতা’র কথা জানালেও তৃণমূলের অন্দরেই সে দাবি উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, সাঁইথিয়া পুরসভার দায়িত্বে নতুন মুখ আনতে চলেছে দল। এ ক্ষেত্রে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান পদের প্রধান দাবিদার যথাক্রমে বিপ্লব দত্ত এবং শান্তনু রায়। তৃণমূল সূত্রের দাবি, তার জেরে আগেই উপ-পুরপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন অনিতা সরকারও।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নোটিফায়েড বোর্ডের সময়ে রাজ্য সরকার মনোনীত চেয়ারম্যান ছিলেন সিপিএমের চণ্ডীচরণ সাধু। কিন্তু ১৯৯৪ সালে প্রথম পুর নির্বাচনে ১১টি আসনেই জয়ী হয় কংগ্রেস। তার পর থেকে এক বারও ওই পুরসভা কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়নি। গত অক্টোবরে দলের ১০ কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় প্রথম বার সাঁইথিয়া পুরসভা কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নেয় অন্য কোনও দল। এ দিন বীরেন্দ্রবাবুর পদত্যাগপত্র প্রাপ্তির কথা মেনে নিয়ে মহকুমাশাসক জানান, ওই পুরসভায় উপপুরপ্রধান পদটিও শূন্য থাকায় পরবর্তী বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত বীরেন্দ্রবাবুই পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলাবেন। নিয়ম মোতাবেক আগামী ৭-১৫ দিনের মধ্যে কাউন্সলিরদের নিয়ে বৈঠকও ডাকতে বলা হয়েছে।
২০০৯ সালে হওয়া শেষ পুর নির্বাচনে ১৬টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১২, জোটসঙ্গী তৃণমূল ১, সিপিএম ১, ফরয়ার্ড ব্লক ১ ও বিজেপি ১টি আসনে জয়ী হয়। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই কংগ্রেস জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তার পর থেকেই দল বদলের মাধ্যমে তৃণমূল রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা, পঞ্চায়েত বিরোধীদের থেকে ছিনিয়ে নিতে শুরু করে। সেই চেষ্টা শুরু হয় সাঁইথিয়াতেও। প্রথমে তৃণমূলে যোগ দেন ফব কাউন্সিলর অম্বিকা দত্ত ও সিপিএমের উত্তম সিংহ। গত সেপ্টেম্বরে কংগ্রেসের একটা বড় অংশের কাউন্সিলরই তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে ঘোষণা করেন। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা নীহার দত্তর ছেলে সব্যসাচী দত্তর প্রচেষ্টায় সে যাত্রায় রক্ষা পায় কংগ্রেস। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত অক্টোবরে পুরপ্রধান বীরেন্দ্র পারখ এবং সব্যসাচীবাবুর ভাই ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিপ্লব দত্ত-সহ ১০ কাউন্সিলর আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেন। রং বদলের এই পর্বে শহর কংগ্রেসের সভাপতি পিনাকী দত্ত-সহ বহু নেতা-কর্মীও তৃণমূলে চলে আসেন।
কিন্তু দল পাল্টেও বীরেন্দ্রবাবু কেন নিজের পদ রাখতে পারলেন না?
বীরেন্দ্রবাবু নিজে দাবি করছেন, “সকলেই জানেন, আমি বছর খানেক ধরেই ভীষণ অসুস্থ। তখন থেকেই কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা তা মানেননি। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও শারীরিক কারণে প্রথমেই দলের কাছে পদ ছাড়ার কথা বলেছিলাম। এত দিনে দল সেই অনুমতি দেওয়ায় পদত্যাগ করেছি।” বীরেন্দ্রবাবু যাই বলুন না কেন, তৃণমূলেরই একটি সূত্র কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে। ওই মহলের দাবি, অধিকাংশ কাউন্সিলরেরই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার নেপথ্যে একটি বড় কারণ বীরেন্দ্রবাবুর উপর তৈরি হওয়া ক্ষোভ ও অনাস্থা। তাঁদের অভিযোগ, দলীয় কাউন্সিলর, নেতা-কর্মীদের বদলে পুরপ্রধান বিরোধীদেরই বেশি প্রাধান্য দিতেন। পুরসভার অধিকাংশ কাজের ক্ষেত্রেই একা সিদ্ধান্ত নিতেন, অন্য কাউন্সিলরদের বিশেষ পাত্তা দিতেন না বলেও তাঁদের দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর বলছেন, “এ সব নিয়ে অন্দরেই একটা ক্ষোভ ছিল। পরে বীরেন্দ্রবাবু নিজে তৃণমূলে যোগ দিলেও দল বদলের ক্ষেত্রে প্রথমে কিন্তু তিনি কাউন্সিলরদের বাধাই দিয়েছিলেন। ফসব মিলিয়ে কাউন্সিলরদের একটি বড় অংশই আর পুরপ্রধান হিসেবে তাঁকে চাননি।” ওই কাউন্সিলরদের ক্ষোভের মুখে পড়েই দল বীরেন্দ্রবাবুকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেয় বলে খবর। এ কথা স্বীকার করে নিয়ে ফব ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া অম্বিকা দত্তও বললেন, “আমি যতদূর জানি, দলই বীরেন্দ্রবাবুকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছিল।”
যদিও দলীয় অন্দরে ক্ষোভের কথা উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ দাবি করেন, “বীরেন্দ্রবাবু দলের কাছে পদত্যাগ করার ইচ্ছা জানিয়েছিলেন। দল তা অনুমোদন করেছে।” সাঁইথিয়ার পুরসভার দায়িত্বে কারা আসতে চলেছেন, এই প্রশ্নের তিনি কোনও জবাব দিতে চাননি। তবে জানিয়েছেন, শীঘ্রই দলের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্য দিকে, বিপ্লববাবুও বলছেন, “এ ব্যাপারে দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.