সাইকেল নেই, কিন্তু স্কেটবোর্ড আছে। অতএব থামবে না চলা। থাকুক তালিবানি নিষেধাজ্ঞা, আফগান মেয়েরা স্কেটবোর্ডে চড়েই যাবে স্কুলে। ছোট ছোট মাথাগুলো হিজাব দিয়ে ঢাকা, পায়ে কিন্তু শক্ত করে বাঁধা স্নিকার জুতো। আর সেই পা-ই স্কেটবোর্ডে রেখে ডানা মেলেছে তাদের স্বপ্নের উড়ান। আশ্বাস আর বিশ্বাসের হাত বাড়িয়েছে এক বিদেশি সংস্থা।
সে দেশের মেয়েদের গতিবিধি, চালচলন সবই নিয়ন্ত্রণ করে ধর্মের অজুহাতে খাড়া করা বাধা-নিষেধের কাঠামো। শিক্ষা তো নেহাৎই বিলাসিতা, হয়তো বা ঔদ্ধত্যও। আফগানিস্তানের মেয়েদের উপর হাজারো নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই এমনই একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সাইকেল চালানোয়। এই কারণে অনেকটা অর্থ আর সময় খরচ করে দূর-দূরান্তের স্কুলে পৌঁছনোটাই মুশকিল ব্যাপার ছাত্রছাত্রীদের কাছে।
কিন্তু তাই বলে কি দমে যাবে শেখার ইচ্ছে? কোপ পড়বে লেখাপড়া শিখে স্বনির্ভর হয়ে ওঠার স্বপ্নে? মোটেই না। এই বিশ্বাসই জুগিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সংস্থা ‘স্কেটিস্তান’। আর তাদের কল্যাণেই আজ স্কেটবোর্ডের সওয়ারি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে আফগান কচিকাঁচারা। দীর্ঘ, বন্ধুর পথ উজিয়ে নিয়মিত ভাবে স্কুলে আসছে সমাজের বিভিন্ন প্রান্তের পড়ুয়ারা। বাহন বলতে চাকা লাগানো একটা পাটাতন, যার পোশাকি নাম স্কেটবোর্ড। আর সব চেয়ে আশার কথা হল, এই পড়ুয়াদের মধ্যে চল্লিশ শতাংশই ছাত্রী।
২০০৭ সালে আফগানিস্তানের পড়ুয়াদের স্কেটবোর্ড চড়া শেখানোর ছোট্ট একটি পরিকল্পনা নিয়ে পথ চলতে শুরু করেছিলেন ‘স্কেটিস্তান’-এর প্রতিষ্ঠাতা অলিভার পেরকোভিচ। কিন্তু আজ আফগানিস্তানের হাজার পড়ুয়াকে স্কেটবোর্ডে পারদর্শী করে তুলে তাঁর সেই সংস্থাটিই খেতাব জেতা আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দলে নাম লিখিয়ে নিয়েছে।
বস্তুত, আফগানিস্তানেই পাকাপাকি ভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছেন অলিভার। সপ্তাহে ছ’দিন করে পাঁচ হাজার ২৪৮ বর্গমিটার এলাকার এক বিশাল চত্বরে জড়ো হয় কাবুলের কয়েকশো ছোট ছোট মুখ। নিয়মিত অভ্যাসে শিখে ফেলে স্কেটবোর্ডে চড়ার কসরৎ। তাই স্কুলে যাওয়ার অন্যতম বাধা যাতায়াত-সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে গিয়েছে তাদের কাছে। স্কুলের পথে পা বাড়ানো আর ততটা কঠিন নয়। |