বিপুল জনসমর্থন সত্ত্বেও ক্ষমতার ভিত যে নড়বড়ে, তা বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছেন ইংলাক শিনাবাত্রা। বৃহস্পতিবার তাঁর সরকারকে সম্পূর্ণ ভাবে অচল করতে পথে নামলেন বিরোধীরা। সে পরিস্থিতি সামলে ওঠার আগেই জাতীয় দুর্নীতি-বিরোধী কমিশন জানাল, তাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে তারা।
ঠিক কী নিয়ে তদন্ত? তাইল্যান্ডের জাতীয় দুর্নীতি-বিরোধী কমিশনের দাবি, ধানচাষিদের জন্য চালু হওয়া ভর্তুকি প্রকল্পের রূপায়ণে ইংলাকের গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই এই তদন্ত। ইংলাক ছাড়াও আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে বলে খবর। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে ‘বহিষ্কার’ করা হতে পারে ইংলাককে। সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন নির্বাচনে জিতলেও শাসনক্ষমতায় ফিরতে পারবেন না ইংলাক।
ঠিক এটাই গত কয়েক মাস যাবৎ করতে চাইছেন বিরোধীরা। নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সরকার-বিরোধিতার মূল লক্ষ্য ছিল, তাইল্যান্ড থেকে ইংলাক এবং বকলমে তাঁর দাদা তাকসিন শিনাবাত্রার প্রভাব দূর করা। বিরোধীদের মূল দাবি, ক্ষমতায় ইংলাক থাকলেও আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছেন স্বেচ্ছা-নির্বাসনে থাকা তাকসিন। যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক মামলা রয়েছে। অতএব যে কোনও মূল্যে শিনাবাত্রা পরিবারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। প্রথম থেকেই এই সরকার-বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিয়েছে বিরোধী ডেমোক্র্যাট পার্টি।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য ২ ফেব্রুয়ারি ফের নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেছেন ইংলাক। কিন্তু তাতে নারাজ বিরোধীরা। তাঁরাও জানেন, রাজধানী ব্যাঙ্ককের উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই ইংলাক-বিরোধিতা সীমাবদ্ধ। জনগণের বাকি অংশ আজও শিনাবাত্রা সরকারের পক্ষে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন হলে তাঁদের জেতার সম্ভাবনা ষোলো আনার উপর আঠারো আনা।
ভোট বয়কে টর দাবিতে আন্দোলন তাই চলছেই। গত চার দিন ধরে ব্যাঙ্ককের মূল সংযোগস্থলগুলিতে জড়ো হয়েছেন বিরোধীরা। এ দিনও রাজস্ব দফতরের তিনটি শাখায় হাজির হন তাঁরা। আধিকারিকদের বলেন, দ্রুত দফতর খালি করতে হবে। তা ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং পূর্ত দফতরেও হাজির হন বিরোধীরা। তাঁদেরই অন্য একটি অংশ তখন বেশ কিছু বৌদ্ধ ভিক্ষুকে নিয়ে তাইল্যান্ডের বিশেষ তদন্তকারি দফতরে ‘হুইসল-প্রচার’ চালাচ্ছে। তবে আগের ঐতিহ্য মেনেই এ দিনের গোটা আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। বিরোধী দলনেতা সুতেপ তাউগসুবানের আশা, সপ্তাহান্তে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হবেন ব্যাঙ্ককে।
সেখান থেকেই ভবিষ্যতের ইতিহাস বদলানো শুরু হয় কি না, সেটাই দেখার। |