এলাকার একমাত্র নর্দমাটি নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। আবর্জনায় পূর্ণ সেই নর্দমার জল আশপাশের বাড়িতে ঢুকছে। পানীয় জলের পাইপেও ঢুকে পড়ছে নোংরা জল। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা। বারবার ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার প্রায় আড়াই ঘণ্টা জি টি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন কুলটির বিডিও পাড়া এলাকার বাসিন্দারা। পরে পুলিশ ও এলাকার কাউন্সিলরের প্রতিনিধি গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। |
জি টি রোড অবরোধ।—নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় বাসিন্দারাই জানান, কুলটি পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিডিও পাড়া লাগোয়া ওই এলাকায় এই সমস্যা বহু দিনের। বছরখানেক ধরে নিকাশির কোনও ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ। ফলে যাবতীয় আবর্জনা এলাকার একমাত্র নালায় গিয়ে পড়ছে। কার্যত ভেঙে পড়েছে নিকাশি ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, জি টি রোডের ধারে একটি বড় নালা রয়েছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জল বয়ে যায় সেই নালা দিয়ে। কিন্তু নালাটি আবর্জনায় ভর্তি। ফলে, জল যেতে পারছে না, উপচে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ঢুকে যাচ্ছে আশপাশের ঘর বাড়িতে। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। এখানেই শেষ নয়, নালাটির পাশ দিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জলের পাইপ গিয়েছে। একটি ভালভও রয়েছে। দেখা গেল, আবর্জনা ভরা জলের তলায় ডুবে রয়েছে ভালভটি। সেই ভালভ চুঁয়ে নোংরা জল ঢুকে যাচ্ছে পানীয় জলের পাইপে। এলাকার বাসিন্দারা সেই জলই পান করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। পানীয় জলের এই সমস্যার কথা জানেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা জানান, বিষয়টি তাঁরা পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও হেলদোল নেই তাঁদের। |
রাস্তা ভরেছে আবর্জনায়। কুলটিতে বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা আর কোনও উপায় না দেখে বৃহস্পতিবার বিডিও পাড়ার কাছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিটি রোড অবরোধ করেন। সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় অবরোধ। সকালের ব্যস্ত সময়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় মুশকিলে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। অবরোধের ফলে বিভিন্ন স্কুলের গাড়িও আটকে যায়। বেশ কয়েকটি স্কুলের পরীক্ষাও চলছিল এই সময়ে। ফলে গাড়ি থেকে নেমে অনেকটা রাস্তা হেঁটে যেতে হয় পড়ুয়াদের। বাসিন্দাদের দাবি, ঘটনাস্থলে পুলিশ এলেও তাঁরা কার্যত নির্বাক দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন এলাকার কাউন্সিলরের প্রতিনিধি, তাঁর স্বামী খুরসিদ আলম। তাঁকে হাতের কাছে পেয়ে বাসিন্দারা আরও বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাঁদের বেশ কিছুক্ষন ধরে বুঝিয়ে অবরোধ তোলা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও কেন পুরসভা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। খুরসিদ আলম বলেন, “আমি এই সমস্যার সমাধানের জন্য অন্তত একশো বার পুরপ্রধান তথা এলাকার বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে বলেছি। কিন্তু তিনি আমার কথার আমলই দিচ্ছেন না।” খুরসিদ আলমের সাফাই, এলাকার বাসিন্দারা যা করেছেন তা কোনও অন্যায় নয়। এ বারও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তবে তিনি নিজে বিক্ষোভে সামিল হবেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কুলটির পুরপ্রধান তথা বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় জানান, কেন ওই এলাকায় নিয়মিত সাফাই হচ্ছে না তা তিনি পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের সাফাই আধিকারিকদের কাছে জানতে চাইবেন। প্রয়োজনে বিভাগীয় পদক্ষেপ করবেন। শনিবারের মধ্যে বিডিওপাড়ার সমস্যাটির সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। |