|
|
|
|
অনুব্রতকে নিয়ে কী কবিতা লিখব
বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে কবিতার বই ‘নির্ভয়া’। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে যাত্রা আর কাজ করতে করতে
এক মাসে লিখে ফেলেছেন ষাটটা কবিতা। শতাব্দী রায়ের সঙ্গে কথা বললেন সংযুক্তা বসু। |
রাজনীতি ছেড়ে দেবেন ভাবছেন নাকি?
না তো। কেন বলছেন এ কথা?
আবার কবিতা লেখা শুরু করেছেন তো। এগারোটা কবিতার বই বের করার পর অনেক বছরের বিরতি। তার পর এ বছর আবার কবিতার বই বেরোচ্ছে। মনে হল রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে গেলেন নাকি হঠাত্!
শুনুন, রাজনীতি একটা অত্যন্ত গদ্যময় জগত্। তার মধ্যে একজন শিল্পীকে থাকতে হলে তার একটা পালাবার পথও দরকার। আমার ক্ষেত্রে সেটা এখন কবিতা। সেই জন্যই এ বার ভাবলাম একটা বই বের করা যাক। যখন পার্লামেন্টে প্রথম যাই তখন সেখানকার কেউ কেউ বলেছিলেন, শিল্পীরা অনেকেই সাংসদ হয়ে আসেন। কিন্তু দু’চার মাস বাদে তাদের আর পাত্তা পাওয়া যায় না। আমি বলেছিলাম দেখুন পাঁচ বছর, থাকি কিনা। থাকলাম তো। নিজের সিদ্ধান্তে রাজনীতি ছাড়ার কথা আমি ভাবতে চাই না।
কোনটা কঠিন বেশি? রাজনীতি না কবিতা?
অবশ্যই রাজনীতি। অনেক মানুষ নিয়ে একটা জটিল ব্যাপার। কবিতা তো আমার ইচ্ছের ব্যাপার। গত এক মাসে ষাটটা কবিতা লিখেছি। তার আগে বহু দিন লিখিনি।
কবিতার বইয়ের নাম জানা গেল ‘নির্ভয়া’। মানে নির্ভয়াকে নিয়ে কবিতা আছে?
অবশ্যই। তবে ‘নির্ভয়া’ কবিতাটা অবশ্য এক বছর আগে ও মারা যাওয়ার পরই লেখা।
লিখেছিলাম:
“আমি, আমি নির্ভয়া
একটা শরীরের নাম নয়
শুধু মাংসপিণ্ডের নাম নয়
আমি তো সেই মেয়েটা তোমার মতো
যে পৃথিবীকে সুন্দর দেখত...”
তা নির্ভয়াকে নিয়ে কবিতা লিখে বই বের করে ফেলছেন। আর এ রাজ্যে যে প্রায় প্রত্যেকদিন এত ধর্ষণের ঘটনা। তা নিয়ে কবিতা লিখলেন না?
মেয়েদের এই নির্যাতনে এ রাজ্যের ছবিটা যে আলাদা তা তো নয়। সারা দেশ জুড়েই একই রকম অবস্থা। তাই এই সময়ের সব নারী নির্যাতনেরই প্রতীক ‘নির্ভয়া’।
কবি সুবোধ সরকার তো কামদুনি এবং নির্ভয়ার ঘটনা নিয়ে একটা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। কবি হিসেবে আপনারও তো একটা সামাজিক দায় আছে।
সুবোধ সরকারের কবিতা আমি পড়ি। তবে এই বইটার কথা আমি শুনিনি। আমি কবিতাকে আলাদা করে আমার প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইনি। এই সময়ের সমাজ, প্রেম, কিছু ভাল লাগা, মন্দ লাগা এই সবই ধরে রাখতে চেয়েছি কবিতায়।
মন্দ লাগার কথা যদি বলেন, তা হলে লোকে যা জানে, বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে আপনার সংঘাত তো বেশ তিক্ততার জায়গায় পৌঁছেছিল। উনি আপনার বিরুদ্ধে রূঢ় বক্তব্য রেখেছিলেন। আপনিও তার পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন। তা এই অনুব্রতর মতো মানুষও তো সমাজের একটা দিক। তাঁকে নিয়ে কবিতা লিখলেন না কেন?
অনুব্রতকে নিয়ে কবিতা (জোরে হাসি)। না না। ওকে নিয়ে কী কবিতা লিখব? অনুব্রত একেবারেই আমার কবিতার জগতের বাইরের মানুষ। ভীষণ ভাবে গদ্য। তবে খুবই যেটা মনে হয় কারও বাহ্যিক আচরণ দেখে তাঁকে পাকাপাকি ভাবে মন্দ লোক আখ্যা দেওয়া যায় না। অনুব্রতের সঙ্গে আমার দেখা হলে ভাল ভাবেই কথা হয়।
তাপস পাল আপনার অনেক দিনের বন্ধুত্ব। এক সঙ্গে রাজনীতি থেকে যাত্রা ও সিনেমা সবই। উনি আপনার কবিতা শোনেন?
ওর সঙ্গে আমার অন্য অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু কবিতা নিয়ে নয়। অবশ্য কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছি, ভাল লাগলে তাপস সেটা আমাকে জানিয়েছে। এটা অনেক বার হয়েছে। |
|
কবি বা শিল্পী যাঁরা হন তাঁদের সৃষ্টির উত্সে অনুপ্রেরণা দেওয়ার মানুষ থাকলে তো ভাল। তাই না?
অনেক ধরনের বন্ধু আছে। তারাই আমার অনুপ্রেরণা। নারী-পুরুষের মধ্যে অনেক অনামা সম্পর্কও তৈরি হয়। সবই প্রেম হবে নাকি?
সেই সব অনামা সম্পর্কেও একটা প্রাণশক্তি আছে। আমারও এমন আছে।
আপনাদের দলনেত্রীও তো কবিতা লেখেন, ছবি আঁকেন। কবিতা শুনিয়েছেন বা ছবি দেখিয়েছেন ওঁকে?
কবিতা অনেকবারই শুনেছেন। প্রশংসাও করেছেন। কিন্তু ছবি দেখেননি। পার্লামেন্টে গিয়ে মাঝে মাঝে একটা মজা হয়। আমি হয়তো দিদির পাশের, পাশের একটা চেয়ারে বসেছি, চার লাইনের একটা কবিতা লিখে ওঁকে পাস করে দিলাম। উনি সেই কবিতার পাশে ছবি এঁকে দিলেন।
যেটা আপনার আসল জায়গা, সেই অভিনয়ে ফিরতে ইচ্ছে করে না?
অভিনয় করতে খুবই ইচ্ছে করে। আজকাল তো সিনেমার ধারাটাই বদলে গিয়েছে। কত অন্য রকমের ছবি হচ্ছে।
অভিনয় করার ইচ্ছে থাকলে তো নতুন পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
এইটাই তো মুশকিল। আমি নিজের কথা বলতে পারি না মুখ ফুটে। অথচ কত নতুন নতুন পরিচালক এসেছেন। আমি ‘শব্দ’ দেখেছি, ‘হেমলক সোসাইটি’ দেখেছি। সব সময়ই তো নিজের কনস্টিটিউয়েন্সিতে থাকি। সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখারও খুব সুযোগ হয় না। ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের এত প্রশংসা। আমার কিন্তু দেখা হয়নি।
‘জাতিস্মর’ দেখবেন তো?
হ্যাঁ দেখার খুব ইচ্ছে। এই ছবিতে তো সুমনদা সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। সেই জন্যেই আরও দেখার ইচ্ছে। সুমনদার গানের প্রচণ্ড ভক্ত। সেই ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই’ এক সময় বারবার চালিয়ে চালিয়ে শুনতাম। একটা ব্যাপার, কবিতা লিখতে গিয়ে মনে হয়, কবিতাগুলো যদি গান হয়, তা হলে অনেক মানুষ শোনে। যেমন সুমনদার বেলায় হয়েছে।
“অমরত্বের প্রত্যাশা নেই/নেই কোনও দাবিদাওয়া/এই নশ্বর জীবনের মানে/শুধু তোমাকেই চাওয়া।” এই গানের লাইন বহু দিন ধরে মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। লিখেছিলেন কবীর সুমন। কখনও মনে হয় না কবিতাই যখন লেখেন এমন একটা দুটো লাইন লিখতে যা পাঠকের মনে থেকে যাবে?
অবশ্যই মনে হয়। কিন্তু সকলেরই যে তেমন হবে তা নয়। কোনও এক ব্রাহ্মমহূর্তে এই সব লাইন জন্মায়। সেই জন্যই বলছিলাম কবিতা যদি গান হয় তা হলে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে।
কবীর সুমন এমন রোম্যান্টিক গীতিকার আর অন্য দিকে সাংসদ হিসেবে এত চাঁচাছোলা, ঠোঁটকাটা। মনে হয় না সাঙ্ঘাতিক একটা বৈপরীত্য? এরকম কেন?
কী করা যাবে? একজন আপাদমস্তক প্রেমিক মানুষও রেগে যেতে পারে। আবার যে মানুষ খুব রূঢ় তার মধ্যেও কবি সত্ত্বা থাকতে পারে।
ছেলের যখন ন’বছর বয়স, তখন সংসারে মেয়ে আনলেন। এত দিন বাদে এই ব্যস্ততার মধ্যে আবার নতুন করে মা হওয়ার ঝক্কি সামলাচ্ছেন কী করে?
ঝক্কি নেই তো। আমার মেয়ের নাম শামিয়ানা। ওর বয়স ন’ মাস। যখন বাড়ি ফিরি দুই ছেলেমেয়েকে পুরোদস্তুর সময় দিই। পার্টি-ক্লাব- প্রিমিয়ারে যাই না, ফেসবুকও করি না, ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকি না। তাই সময়ের অভাব হয় না।
মেয়েকে দত্তক নিয়ে সংসারে আনতে হল কেন? আপনার নিজেরই তো হতে পারত!
আমি তো সে ভাবে কোনও প্ল্যান করিনি। যে অসহায় পরিস্থিতিতে শামিয়ানাকে পেয়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল ওকে সংসারে নিয়ে যাই। এমন পরিস্থিতিতে থাকা হাজার একটা মেয়েকে সাধ্য থাকলে আমি আদর করে ঘরে নিয়ে যেতাম। আমার সিদ্ধান্ত দেখে যদি সমাজের একজন মানুষও শুধরোয়, কন্যা সন্তানের মর্ম বোঝে তা হলে আমি ধন্য হয়ে যাব। আমার মেয়ের খুব শখ ছিল। শামিয়ানা সে আশা পূর্ণ করেছে। মেয়ে মানে বাড়িতে যেন সাজ-সাজ রব। মেয়ে না থাকলে কত অনুভূতি পূর্ণতাই পায় না। |
|
|
|
|
|