প্রথম পর্যায়ের কাজে প্রশাসনিক সাহায্য না মেলার অভিযোগ তুলে রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের বিনিয়োগ ঝাড়খণ্ডে সরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল ডিভিসি। রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তরের হস্তক্ষেপে জটিলতা কাটার লক্ষ্মণ দেখা দিতেই সেই রঘুনাথপুরে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করল এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। যে পর্যায়ে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা!
বুধবার থেকে মূল প্রকল্প এলাকার মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ের বয়লার বসানোর জন্য মাটি কাটার কাজ শুরু করেছে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা ম্যাকনেলি ভারত। দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় জমি আগেই অধিগৃহীত হয়েছে। ফলে, নতুন করে জমি নেওয়ার সমস্যা নেই। চার মাস আগেই প্রকল্পস্থলে চলে এসেছিল ঠিকাদার সংস্থাটি। কিন্তু, প্রথম পর্যায়ের ওয়াটার করিডর ও রেল করিডর তৈরিতে অনিচ্ছুক জমিদাতাদের একাংশের বাধায় প্রকল্প ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতার কারণে ওই ঠিকা সংস্থাকে কাজ শুরু করার অনুমতি দেননি ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।
রঘুনাথপুরে দু’টি পর্যায়ে ১৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলছে ডিভিসি। কিন্তু, প্রথম পর্যায়েরই ১২০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট তৈরি করার ক্ষেত্রে জমিজটের কবলে পড়ে প্রকল্প রূপায়নে গভীর সমস্যায় পড়েন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। বস্তুত, গত প্রায় ছয়-সাত মাস ধরে নির্মীয়মাণ এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে যথেষ্ট টানাপোড়েন চলেছে। মূল সমস্যা ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জলের সংস্থান করার ক্ষেত্রে দশ কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াটার করিডর তৈরিতে। বিভিন্ন দাবিতে বারবার কাজ বন্ধ করেছিল অনিচ্ছুক জমি মালিকদের একটি সংগঠন। পাশাপাশি কাজে স্থানীয়দের নিতে হবে এই দাবি তুলে অ্যাশপন্ড বা ছাই পুকুর তৈরির কাজও বন্ধ করে দিয়েছিল স্থানীয় মানুষজন। |
প্রশাসনিক স্তরে সক্রিয় সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ তুলে রঘুনাথপুর থেকে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় ঝাড়খণ্ডে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে লিখিত আকারেই জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তর থেকে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করা হয়। জটিলতা কাটতে শুরু করে ওয়াটার করিডর ও ছাই পুকুরের। এর পরেই পাশা পাল্টায়। ডিভিসি-র রঘুনাথপুরের প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র বলেন, “রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তর, পুলিশ-প্রশাসন, জেলা পরিষদসব মহলের হস্তক্ষেপে শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রঘুনাথপুরে। সেই প্রেক্ষিতেই বুধবার থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়েছে।”
ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে ওয়াটার করিডরের কাজের তদারকি করার সময় স্থানীয় কিছু জমি মালিকের হাতে নিগৃহীত হন ডিভিসি-র দুই ইঞ্জিনিয়ার। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের জেল হাজত হয়। এলাকায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রেখে কাজ করার নির্দেশও জারি করে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। তার পর থেকে নির্বিঘ্নেই চলেছে ওয়াটার করিডরের মাটি কাটার কাজ। দশ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র দেড় কিলোমিটার বাকি রয়েছে। একই ভাবে বিনা বাধায় কাজ চলছে ছাইপুকুরের। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করার প্রেক্ষিত তৈরি হয়েছিল। তাই ডিভিসি কর্তৃপক্ষও আর কাজ শুরু করতে দেরি করেননি।
ডিভিসি-র এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তর হস্তক্ষেপ জট কাটাতে হস্তক্ষেপ করেছে। প্রয়োজনীয় সাহায্য মিলছে প্রশাসনের তরফে। জেলা পরিষদের সভাধিপতিও বারবার এলাকায় আসছেন। জটিলতা কাটছে বলেই সংস্থার শীর্ষস্তর থেকে অনুমোদন মেলার পরে দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু করা হয়েছে।” ডিভিসি সূত্রের খবর, দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে কাটা মাটি ব্যবহার করা হবে ছাই পুকুরের দেওয়াল (অ্যাশ ডাইক) তৈরিতে। অথচ, এই ছাই পুকুরের কাজ বন্ধ থাকায় দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শুরুই করা যাচ্ছিল না। |