সম্পাদকীয় ১...
মন বদলাইয়াছে
ংস্কারের পথে প্রথম ধাপ মানসিকতার সংস্কার। মন যত ক্ষণ না সংস্কারের প্রয়োজন বুঝিতে পারে, সংস্কারের পথটিকে যথার্থ বলিয়া মানিয়া লইতে পারে, তত ক্ষণ সংস্কারের সকল প্রচেষ্টাই বড় জোর অর্ধেক সফল হইবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত প্রথম ধাপটি চিনিতে পারিয়াছেন। কয়েকটি শিল্প সংস্থাকে আইনি ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত জমি রাখিতে অনুমতি দেওয়া এবং পাঁচটি চা বাগান বেসরকারি হাতে ছাড়িয়া দেওয়ার যুগপৎ সিদ্ধান্ত সেই ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করিতেছে। এই সিদ্ধান্ত দুইটি যে একটি দীর্ঘ যাত্রাপথের প্রথম সোপানমাত্র, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু, অভিমুখটি লক্ষণীয়। গত বৎসর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর যে একটি পরিবর্তন হইয়াছে, এত দিনে তাহা স্পষ্ট। বণিকসভার সহিত আলোচনাতেই হউক বা সরকারি কাজের ক্যালেন্ডার তৈরি করিয়া দেওয়ায়, মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় প্রতিটি সিদ্ধান্তই একটি নির্দিষ্ট দিকে ইঙ্গিত করিতেছে। নেতির রাজনীতিকে ভুলিয়া কাজ করিবার মানসিকতার দিকে। বর্তমান সিদ্ধান্তদ্বয়ও সেই অভিমুখেই। যে চা বাগান চালাইতে প্রতি মাসে ২৫ কোটি টাকা লোকসান স্বীকার করিতে হয়, তাহা বেসরকারি হাতে ছাড়িয়া দেওয়াই কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয়। বাম আমলে অথবা বর্তমান শাসকদের প্রথম দুই বৎসরেও কাণ্ডজ্ঞানের পথ রোধ করিত রাজনীতি। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন যদি সত্যই সেই রাজনীতির টান অস্বীকার করিতে পারে, তাহা সুসংবাদ।
দুইটি প্রশ্ন। এক, মনের এই পরিবর্তন কি বাস্তবায়িত হইবে, না কি তাহা শুধু কথাতেই থাকিয়া যাইবে? দুই, মানসিকতার এই পরিবর্তন, সত্য হইলেও, রাজ্যের শিল্পায়নের ছবিটি বদলাইতে পারিবে কি? প্রথম প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যৎ দিবে, তবে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলি দেখিলে সেই উত্তর বিষয়ে কিঞ্চিৎ আশাবাদী হওয়া যাইতে পারে। দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর সংশয়াচ্ছন্ন। মানসিকতার পরিবর্তন শিল্পমহলকে পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ে খানিক উৎসাহী করিতে পারে বটে, কিন্তু এই সিদ্ধান্তগুলির দৌলতেই রাজ্যে বিনিয়োগের বান ডাকিয়া যাইবে বলিয়া প্রত্যয় হয় না। রাজ্য প্রশাসন রাজনীতি ভুলিয়া সত্যই শিল্পের, বাস্তবের, উন্নয়নের দাবি বুঝিতে শিখিল কি না, তাহা দেখিতে শিল্পমহল আগ্রহের সহিত অপেক্ষা করিবে। জমির প্রশ্নটিই যেমন। কোনও সংস্থা গ্রামাঞ্চলে ২৪ একরের বেশি জমি রাখিতে চাহিলে সরকারের অনুমতি লাগিবে, এমন আইন আক্ষরিক অর্থেই ভূভারতে কোথাও নাই। পশ্চিমবঙ্গেই বা এই একুশে আইনটি রাখিতে হইবে কেন? শিল্পমহল দেখিতে চাহিবে রাজ্য সরকার উদ্যোগ করিয়া এই ধারাটিকে বাতিল করে কি না। করিলে, তাহা শিল্পায়নের পথে একটি বড় পদক্ষেপ হইবে।
তবে, সূচনাটি আশাপ্রদ। চা বাগানের বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে পরিচালনার দায়িত্বটি বেসরকারি পেশাদার সংস্থার হাতে তুলিয়া দেওয়া প্রশাসনের পরিণতমনস্কতার প্রমাণ। নীতিগত সিদ্ধান্ত করা রাজনীতিকদের কাজ, কিন্তু তাহার বাস্তবায়ন পেশাদাররাই দক্ষ ভাবে করিতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে এই কথাটি বুঝিয়াছে, শিল্পমহল তাহাকে ইতিবাচক বার্তা হিসাবেই দেখিবে। জমির ক্ষেত্রেও একই রকম ইতিবাচক বার্তা আবশ্যক। সরকার জমির ঊর্ধ্বসীমা উঠাইয়া দিক, বাজারটিকে সরকারি বিধিনিষেধের শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করুক। শিল্পের জন্য জমির বাজারটিকে কার্যকর এবং কুশলী করিয়া তুলিবার গুরুত্বের কথা অমিত মিত্র সম্যক বুঝিবেন। অন্তত, ‘প্রথম’ অমিত মিত্র, যিনি দীর্ঘ কাল বণিকমহলের প্রতিনিধি ছিলেন। ‘দ্বিতীয়’ অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রকে এই গুরুত্বের কথা বুঝাইবার দায়িত্ব সেই প্রথম অমিত মিত্রের। শিল্পমহল এই রাজ্য সম্বন্ধে ফের উৎসাহী হইতেছে। কোনও মতেই এই সুযোগ নষ্ট করিলে চলিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.