এক মাস আগে রাজ্যকে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল একমাত্র দরদাতা ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি)। সেই চিঠির কোনও উত্তর না-পেয়ে ক্ষুব্ধ এই নবরত্ন সংস্থা। তবে এখনই মালিকানা নিয়ে আইনি বিবাদের জেরে নিলাম প্রক্রিয়া থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও প্রস্তাব আসে কি না, তার অপেক্ষায় রয়েছে আইওসি।
ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি রাজ্যকে একটি চিঠি দেয় ইন্ডিয়ান অয়েল। সরকারি সূত্রের খবর, চিঠিতে হলদিয়া পেট্রোকেমের আইনি লড়াই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা। কারণ এই বিবাদের জেরেই শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছিল ইন্ডিয়ান অয়েল। একই সঙ্গে শেয়ার নিলাম নিয়ে পর পর মামলা হওয়ার জেরে এই গোটা প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলে তারা।
তার কারণ রাজ্য সরকার চুক্তিপত্র এবং অন্যান্য নথিপত্রে সব সময়ে ৬৭.৫০ কোটি শেয়ার বিক্রির কথা বলে এসেছে। এর মধ্যে বিতর্কিত ১৫.৫০ কোটি শেয়ারও রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী ওই শেয়ারের মালিকানা দাবি করে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যেতে পারে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের চুক্তিপত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ইন্ডিয়ান অয়েল। এমনকী, তারা জানতে চায় চুক্তিভঙ্গ হচ্ছে কি না, তাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিক রাজ্য। কিন্তু এর কোনও উত্তর মেলেনি রাজ্যের পক্ষ থেকে। আর এতেই সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান অয়েল। এ নিয়ে আলোচনার ন্যূনতম প্রচেষ্টাও রাজ্য না-করায় ক্ষুব্ধ তারা।
তবে এই চিঠিতে ‘আর্নেস্ট মানি’ বা দরপত্র জমা দেওয়ার সময়ে যে-টাকা দিয়েছে সংস্থা, তা ফেরত নিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গ নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই টাকার অঙ্ক ২০ কোটি। এ নিয়ে হলদিয়া পেট্রোকেমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উত্তম বসুকে ফোন ও এসএমএস করেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
গত বছর মে মাসে পেট্রোকেমে নিজের শেয়ার বিক্রি করে দিতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় রাজ্য। শেয়ার কিনতে চেয়ে দাম জানানোর সময়সীমা ঠিক হয় ৩১ অগস্ট। কিন্তু শেয়ার কেনার চুক্তিপত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পিছিয়ে যায় সময়সীমা।
নিলামের সিদ্ধান্তের পর থেকেই সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে উঠে এসেছিল গেইল, ইন্ডিয়ান অয়েল, ও এন জি সি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নাম। ছিল বেসরকারি রিলায়্যান্স, কেয়ার্ন ও এসার-ও। তবে চূড়ান্ত পর্বে লড়াইটা ছিল ইন্ডিয়ান অয়েল বনাম রিলায়্যান্স। অক্টোবরে দরপত্র জমা দেয় শুধু ইন্ডিয়ান অয়েল। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দরপত্র জমা দেওয়ার দিন রিলায়্যান্স ফোন করে জানিয়ে দেয়, তারা অংশগ্রহণ করছে না। প্রসঙ্গত, সংস্থায় ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান অয়েলের ১৫ কোটি শেয়ার রয়েছে।
এ দিকে পেট্রোকেমের অর্থ সঙ্কট বাড়ছে। মাথার উপরে বিআইএফআরের খাঁড়া। অর্ধেক হয়েছে উৎপাদন। আইনি জটে আটকে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া। শীঘ্রই নতুন পুঁজি না-ঢাললে, কারখানা সচল রাখাই যে দায়, সে কথা স্বীকার করেছে রাজ্য ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী, দু’পক্ষই। কিন্তু একের পর এক মামলায় টিকে থাকার লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছে সংস্থা। |