|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
ত্রিদিব (২৫) • বাবা (৬২) • মা (৫৩) • দাদা (৩০) • দিদি (২৮)
ভিন্ রাজ্যে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত • মাইনে বেড়েছে মাস তিনেক • পরিবার কলকাতায় • বাড়ির দায়িত্ব নিতে হয়
• লক্ষ্য, ২০১৫-র মধ্যে দিদির বিয়ে • ইচ্ছে, পাকা বাড়ি তৈরি • চান, গাড়ি কিনতে • স্বপ্ন, সচ্ছল ভবিষ্যত্ |
|
মাসে নিট আয় |
• বেতন
৪৫,০০০ |
সম্পদ |
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট
১,০০,০০০ |
খরচ (মাসে) |
• বাড়িতে পাঠান
৭,০০০ |
• নিজের
৭,০০০ |
• শিক্ষা ঋণের কিস্তি
৫,০০০ (বাকি ৯০ হাজার) |
|
সঞ্চয় (মাসে) |
• পিএফ
২,১৩০ |
• এলআইসি
২,০৮৮
(বিমা মূল্য ৩.৫০ লক্ষ, ২০২৮ পর্যন্ত) |
• আইএনজি বৈশ্য বিমা
১,৩৬৭ (বিমা মূল্য ১.৭০ লক্ষ, ২০২৮ পর্যন্ত)
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
নিজের জীবনের সুখ- স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে আমরা অনেকেই পরিবারের কথা মনে রাখি না। বিশেষত ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে থাকলে অনেকে শুধুমাত্র টাকা পাঠিয়েই কর্তব্য পালন করেন। ত্রিদিব সেখানে ব্যতিক্রম। নিজের আর্থিক পরিকল্পনার কথা ভাবতে গিয়ে কখনও তিনি পরিবারের কথা ভুলে যাননি। বরং তাঁর সব ক’টি স্বপ্নই পরিবারকে ঘিরে। ত্রিদিব নিজের চিঠিতে বেশ কিছু ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন, যার মধ্যে প্রধান হল দিদির বিয়ের জন্য সঞ্চয় ও পাকা বাড়ি তৈরি। এক বছরের মধ্যেই এই স্বপ্নগুলি পূরণ করতে চান। কিন্তু যেহেতু পুরো পরিবারের দায়িত্ব তাঁর উপর, ফলে সব এক সঙ্গে করার মতো টাকা জমানো হয়তো সম্ভব হবে না। তবে এক এক করে এই সব কাজে অবশ্যই সফল হতে পারবেন তিনি। কী ভাবে সেই লক্ষ্য পূরণ অপেক্ষাকৃত সহজ হবে, আসুন দেখি— |
জীবনের সুরক্ষা |
সব মিলিয়ে ত্রিদিবের ৫.২০ লক্ষ টাকার জীবনবিমা রয়েছে। কিন্তু পরিবারের প্রতি তাঁর যা দায়বদ্ধতা, তাতে তাঁর কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ওই বিমার টাকায় সংসার চলবে না। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য লগ্নির আগে তাঁকে প্রথমেই বিমার অঙ্ক বাড়াতে হবে। কত টাকার বিমা করতে হবে, তা জানার সহজ উপায় রয়েছে।
ত্রিদিবের মাসে আয়: ৪৫,০০০ টাকা
বছরে মোট আয়: ৪৫,০০০ x ১২ =৫,৪০,০০০ টাকা
সম্ভাব্য রিটার্ন: ৮%
বিমা থেকে এখনকার আয় পেতে মোট সম্পদের পরিমাণ হতে হবে: ৬৭,৫০,০০০ টাকা
ত্রিদিবের ৫.২০ লক্ষ টাকার বিমা ইতিমধ্যেই রয়েছে। ফলে তাঁকে আরও (৬৭,৫০,০০০-৫,২০,০০০) =৬২,৩০,০০০ টাকার বিমা করতে হবে। ২০ বছরের জন্য ওই টার্ম পলিসি করতে বছরে খরচ হবে প্রায় ৯,৭২৮ টাকা (মাসে ৮১০ টাকা)। আপাতত তাঁর হাতে মাসে প্রায় ২২,৫০০ টাকা থাকে। সেখান থেকে তিনি সেই টাকা দিতে পারবেন। মনে হতেই পারে, যেখানে রিটার্ন নেই, সেখানে এত টাকা দেব কেন? কিন্তু এর মধ্যে যদি আপনার কিছু হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে বিপদে পড়বে পরিবার। তাই এই বিমা জরুরি। |
দিদির বিয়ে |
২০১৫-র মধ্যে দিদির বিয়ের ব্যবস্থা করতে চান ত্রিদিব। ফলে তাঁর হাতে সময় খুব কম। তাঁকে এক বছরের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা জমাতে হবে।
• মাসে ১০ হাজার টাকা জমা করুন রেকারিং ডিপোজিটে। ৮.৭৫% সুদে এই খাতে জমবে প্রায় ১.২৬ লক্ষ টাকা।
• স্বল্পমেয়াদি ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এস আই পি) পদ্ধতিতে মাসে ৫,০০০ টাকা রাখুন। এখান থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ৬২,৮৩৫ টাকা (৮.৫% রিটার্ন ধরে)।
• গোল্ড ফান্ড/ইটিএফে এসআইপি পদ্ধতিতে ৫,০০০ টাকা লগ্নি করুন। ৮.৭৫% সুদ ধরে এ ক্ষেত্রে প্রায় ৬৩,০০০ টাকা জমবে।
অর্থাত্ সব মিলিয়ে ত্রিদিবের হাতে আসবে প্রায় ২.৫২ লক্ষ টাকা। বিয়ের জন্য তা হয়তো যথেষ্ট নয়। তবে সোনার গয়নার ব্যবস্থা যদি করা থাকে, তা হলে কিছুটা সুরাহা হবে। চাইলে এখন যে
১ লক্ষ টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে, তার কিছুটা দিয়ে সোনার গয়না তৈরিও করে রাখতে পারেন। এখানে মনে হতেই পারে যে, রেকারিং বেশি সুরক্ষিত, তা হলে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা কেন রাখব? তার অন্যতম কারণ, রেকারিং-এর রিটার্ন সারা বছরের জন্যই নির্দিষ্ট। কিন্তু ডেট ফান্ডে রিটার্ন আপাত ভাবে কম হলেও বেশি রিটার্নের সুযোগ আছে। |
শিক্ষা ঋণ শোধ |
সোনার গয়নার আগে ওই সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে অন্তত ২০ হাজার টাকা দিয়ে শিক্ষা ঋণের কিছুটা শোধ করুন। এর পর আর ৭০ হাজার টাকা বাকি থাকবে। সে ক্ষেত্রে দিদির বিয়ে পর্যন্ত ঋণের বেশির ভাগটাই শোধ হয়ে যাবে। যে-সামান্য টাকা বাকি থাকবে, তা নিজের জমানো টাকা থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। ঋণ শোধ হলে সেই খাতের টাকা অন্যান্য কাজে লাগাতে পারবেন। |
বাড়ি তৈরি |
ত্রিদিবের নিজেদের জমিতে কাঁচা বাড়ি রয়েছে। সেখানেই পাকা বাড়ি তৈরি করতে চান। কিন্তু ২০১৪-র মধ্যেই তা সম্ভব নয়। কারণ দিদির বিয়ের জন্য তাঁকে আগে সঞ্চয় করতে হবে। ফলে তখন ২০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন না তিনি। কিন্তু দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর, ওই খাতের লগ্নিগুলি বন্ধ হবে ও শিক্ষা ঋণ শোধ হয়ে যাবে। ফলে তাঁর হাতে থাকবে প্রায় ২৭,০০০ টাকা।
• গৃহঋণ নিতে হলেও, কিছুটা আপনাকে নিজের থেকে লগ্নি করতে হবে। ফলে ঋণের আবেদন করার আগে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে ছ’মাসের একটি রেকারিং ডিপোজিট খুলুন। এই খাতে যে-টাকা জমবে, তা আপনার বাড়ির ডাউনপেমেন্ট-এর কাজে লাগবে। তার পর ঋণের জন্য আবেদন করুন। তবে তা করতে করতে ২০১৫-র শেষ দিক হয়ে যাবে।
• ২০ বছরের জন্য ২০ লক্ষ টাকার মাসিক কিস্তি পড়বে প্রায় ১৯,৮৩৩ টাকা (১০. ৪% সুদ ধরে)। ২০১৫ সালে তা কিস্তি হিসেবে দেওয়া ত্রিদিবের ক্ষেত্রে খুব একটা কঠিন হবে না। |
বাড়তি টাকার বিনিয়োগ |
• বাড়ির ঋণ নেওয়ার পর হাতে যে টাকা থাকবে, তা দিয়ে প্রথমে বাবা-মার জন্য ১ লক্ষ টাকার একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার স্বাস্থ্য বিমা করান। বেতন বাড়লে নিজের আলাদা স্বাস্থ্য বিমা করতে হবে। বিয়ের পর স্ত্রীকেও এর আওতায় আনতে হবে। দু’ক্ষেত্রেই ধাপে ধাপে বিমা-মূল্য বাড়ানোয় জোর দিন।
• স্বাস্থ্য বিমা করানোর পরও যা হাতে থাকবে, তা এসআইপি-র মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে ও রেকারিং ডিপোজিটে সমান ভাবে লগ্নি করুন। এই টাকা আপনি নিজের বিয়ের জন্য অথবা বাড়ির ঋণ শোধ করার কাজে লাগাতে পারবেন। তবে আগামী দিনে আপনার বেতন বাড়বে। তখন আরও নানা ক্ষেত্রে লগ্নি ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকবে। |
গাড়ি কেনা |
ত্রিদিবের চিঠি পড়ে ভাল লাগল যে তিনি জানেন, গাড়ি কিনতে চাইলেও এখন তা পারবেন না এবং এ জন্য তিনি অপেক্ষা করতে রাজি। আমারও তাই মত। আগে অন্য বিষয়গুলি সামলে নিন, তার পর গাড়ির কথা ভাবুন। |
বিমার টাকা ফের লগ্নি |
• আইএনজি-র মানি ব্যাক প্রকল্পটি থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে ৩০ হাজার টাকা পান ত্রিদিব। সেই টাকা কোথায় লগ্নি করা যায়, তা জানতে চেয়েছেন তিনি। ওই টাকা দিয়ে আপনি বাড়ির ঋণের প্রি-পেমেন্ট করতে পারেন। তাতে আপনার ঋণের অঙ্ক কিছুটা কমবে।
• চাইলে ওই টাকা নিজের বিয়ের জন্য সঞ্চয় করতে পারেন। বিয়ে হওয়ার পর ওই প্রকল্প থেকে যে-টাকা পাবেন, তা দিয়ে তখন ঋণ শোধ করতে পারেন। |
অবসরের সঞ্চয় |
আপাতত ত্রিদিবের ঘাড়ে পুরো পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে অবসর জীবনের লক্ষ্যে আলাদা করে সঞ্চয় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু, ত্রিদিবের বয়স মাত্র ২৫ বছর। অর্থাত্ তাঁর হাতে অনেকটা সময় রয়েছে অবসরের পরিকল্পনা করার জন্য। তবে জীবনবিমাগুলি চালিয়ে যান। ২০২৮ সালে সেই টাকা পাবেন। তখন তা বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করতে পারবেন।
তবে বাড়ি তৈরিতে হাত দেওয়ার পর তাঁকে নিজের বিয়ে এবং পরিবার শুরুর কথাও ভাবতে হবে। সেই সময়ে এখনকার মতোই পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। তখনও এক জন বিশ্বস্ত বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। সে ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে পরিবার এবং অবসর জীবনের সঞ্চয় পরিকল্পনার উপর।
খুব কম বয়সে সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন ত্রিদিব। আশা করব তিনি সেই দায়িত্ব ভাল মতো পালন করবেন। |
(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত) |
|
|
|
|
|