হাতে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক কিশোরী। তাতে লেখা, “আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভদ্র ব্যবহার করিনি। তাই আমার আইপ্যাডটি বেচছি। এখান থেকে যে অর্থ আসবে তা আমি ‘বিট বুলিং চ্যারিটি’তে দিতে চাই।
আশা করি, এর পর আমার ব্যবহার পাল্টাবে। আমি আর কোনও দিন সাইবার বুলিং করব না। কারণ বুলিং জিনিসটা ভাল না।”
মেয়েকে উচিত শিক্ষা দিতে মা নিজেই মেয়ের ছবি একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পোস্ট করেছিলেন। একটি সাইট থেকে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য সাইটেও। ব্যস। হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের বন্যা। সেই সঙ্গে শুরু বিতর্কও। ‘সাইবার বুলিং’ করার অপরাধে শাস্তি পাওয়া ওই কিশোরীর ছবিটি নিয়ে এখন নেট দুনিয়া তোলপাড় হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদেরই সমবয়সি কাউকে হেনস্থা বা অপমান করলে তাকে বলে সাইবার বুলিং। আমেরিকার নর্থ ক্যারোলাইনার বাসিন্দা হেলি শিনেডার ঠিক এমনটাই করত।
মেয়েকে অনেক বুঝিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় শেষমেশ অন্য একটি উপায় বার করলেন মা কারা শিনেডার। তিনিই হেলিকে বাধ্য করেছেন তার অতি পছন্দের আইপ্যাডটি বিক্রি করতে। সেই অর্থ হেলিকে দিতে হবে ‘অ্যান্টি সাইবার বুলিং’ চ্যারিটি ফান্ডে। কারার আশা, এই ভাবেই মেয়েকে ঠিক রাস্তায় আনতে পারবেন তিনি। মেয়েও প্ল্যাকার্ডে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সে ভবিষ্যতে আর বুলিং করবে না।
হেলির ওই ছবিটিতে ইতিমধ্যেই একুশ হাজার কমেন্ট পড়েছে। উনচল্লিশ হাজার নেটপ্রেমী ছবিটি শেয়ার করেছেন। আর প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পোস্টটি লাইক করেছেন। তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নিজের মেয়ের এ রকম ছবি পোস্ট করায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে কারাকে। কেউ কেউ তো কারাকেই বুলিং-এর অপরাধে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, এ ভাবে প্রকাশ্যে নাবালিকা মেয়ে ও তার করা অন্যায়ের ছবি সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করে কি কারা নিজে কোনও অপরাধ করেননি? তাঁদের আরও বক্তব্য, এ ভাবে সন্তানকে নিয়মানুবর্তিতা শেখানোটা হঠকারিতা।
কারা যদিও তাঁর নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। মেয়েকে সহবত শেখানোর এটাই ঠিক রাস্তা বলে মনে করছেন তিনি। কারা জানিয়েছেন, বাড়ির অন্দরে কী ঘটছে, তা সকলের সামনে আসুক তা তিনি প্রথমে চাননি। মেয়ের ছবিও পোস্ট করতে চাননি। কিন্তু আইপ্যাডটি বেচে অর্থ তোলাটাও জরুরি ছিল। সেই কাজটা যাতে তাড়াতাড়ি হয়, মূলত সে জন্যই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দ্বারস্থ হন তিনি। কারার কথায়, “আমি অন্যের ভাবাবেগকে সম্মান করি। তাঁদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। তবে আমিও আমার নিজের মতে চলি।
আমার বিশ্বাস, আমার মেয়ে যে ধরনের অন্যায় করছে, সে জন্য তার এমন শাস্তিই প্রাপ্য।” |