হোম থেকে বধূ হতে চললেন অনাথ দুই কন্যা
র মাত্র দিন পাঁচেক পরেই বিয়ে। কন্যাকর্তার দলে হাজির থাকবেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা থাকবেন সস্ত্রীক। সব কিছু যাতে সুষ্ঠ ভাবে মেটে, তার জন্য নাগরিক কমিটির সদস্য শ্যামদাস শ্যাম, রাজেশ সাউ, মহেন্দ্র সিংহ সালুজারা ছুটে বেড়াচ্ছেন।
কার মেয়ের বিয়ে? কোনও সরকারি বড় কর্তার নয়। হোমরা-চোমরা কোনও মন্ত্রী বা নেতারও নয়। বিয়ে স্বাগতা আর রুমার। যারা বড় হয়ে উঠেছে সরকারি হোমে। দু’জনের বিয়ে হচ্ছে একই বাড়িতে, দুই ভাইয়ের সঙ্গে। মেজো ছেলে রাজেন্দ্রনাথের সঙ্গে রুমা, আর ছোট ব্রজেন্দ্রনাথের সঙ্গে স্বাগতার বিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের বাবা। সামরিক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রবীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
বাবা আর দিদির সঙ্গে রাজেন্দ্র ও ব্রজেন্দ্র। ছবি: উদিত সিংহ।
পণের দাবিতে বধূনির্যাতন, বধূহত্যায় এ রাজ্য যখন দেশে শীর্ষের কাছাকাছি, তখন দুই ছেলের জন্য সরকারি হোমের অনাথ মেয়েকে বরণ করে আনার ঘটনা আপ্লুত তাবড়-তাবড় মানুষ। জেলা শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের (সিডব্লিউসি) চেয়ারপার্সন শিখা আদিত্যের কাছে এই বিয়ের কথা জানতে পেরে কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “আমার মেয়ে নেই। একটি মেয়ের বাবা হওয়ার সুযোগ দিন। এক জনকে আমি সম্প্রদান করব।” অন্য জনকে সম্প্রদান করতে চেয়েছেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, জানান শিখাদেবী। “পুলিশ সুপার, বর্ধমান থানার আইসি এবং নাগরিক কমিটির কাছেও সাহায্য পাচ্ছি, ” বলেন তিনি। প্রথম ঘটকালি অবশ্য করেছে এক জোড়া পাত্র-পাত্রীই। স্বাগতার সঙ্গে আলাপ হয় ব্রজেন্দ্রনাথের, অচিরেই প্রেম। ঢলদিঘিপাড়ার হোমের স্বাগতাকে ব্রজেন্দ্রনাথ রেজিস্ট্রি-বিয়ে করে বসে আছেন, সে খবর প্রথমে বাড়িতে পৌঁছয়নি। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “কয়েক মাস আগে ওরা বিয়ে করেছে খবর পাই। মেয়ে কৃষ্ণা বলে, মেয়েটি ভাল। আমিও স্বাগতার সঙ্গে আলাপ করে দেখি, সে সত্যিই আমার পুত্রবধূ হওয়ার যোগ্য। পরে আমার মেয়েই প্রস্তাব দেয়, রাজেন্দ্র আর ব্রজেন্দ্রের বিয়ের অনুষ্ঠান এক সঙ্গে করতে।”
কিন্তু রাতারাতি রাজেন্দ্রের পাত্রী পান কোথায়?
এ বার ঘটকালি করতে এগিয়ে আসেন শিখাদেবী। তিনিই সন্ধান দেন, রুমা প্রামানিক নামে একটি মেয়ে রয়েছে আসানসোলের হোমে। তাঁকে দেখতে যান রবীন্দ্রনাথবাবু। দেখে মুগ্ধ। তাঁর বর্ণনায়, “মেয়েটির চেহারায় একটা বিনয়ের ছাপ রয়েছে। নম্রতাও। খোঁজ নিয়ে জানলাম, স্বাগতার মতো ও-ও বাবা-মাকে হারিয়েছে। এখানে এলে ও নিজের ঘর পাবে। বছর দুই আগে আমার স্ত্রী মারা যাওয়া ইস্তক এই ঘর-সংসার লক্ষ্মীহীন। এ বার তাই জোড়া লক্ষ্মী আনছি।”
আগামী সোমবার, ২০ জানুয়ারি লাখুড্ডি জলকল এলাকায় পুরসভার অতিথিশালায় গোধূলি লগ্নে বিয়ে স্থির হয়েছে। বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুরে বাড়ি রবীন্দ্রবাবুর। স্ত্রী বেলারানি কয়েক বছর আগে গত হয়েছেন। তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড়ছেলে কাজলও আর নেই। বাকি দুই ছেলে বর্ধমান শহরেই মোবাইল বিক্রির ব্যবসা করেন।
কী বলছে পাত্রীরা? স্বাগতা বলেছেন, “শিখাদিদি তো আমাদের মা। আমার সঙ্গে ব্রজেন্দ্রর রেজিষ্ট্রি-বিয়ের সময়ে বলেছিলেন, তোকে যাতে ছেলের বাড়ির লোকেরা মেনে নেয়, দেখব।” মোবাইলের ও পারে রুমার স্বরে লাজুক গলা, “আশা করতে পারিনি, এমন করে সংসার পাব। জীবনে তো ভাল কিছু ঘটতে দেখিনি!”
ধাঁধা থাকল একটাই। মেজোবৌ রুমার চেয়ে ছোটবৌ স্বাগতা বছর দু’তিনেকের বড়। কে কাকে ‘দিদি’ বলে ডাকবে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.