একশো বছরের বেশি পুরনো বাড়ির ভিতরের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। দেওয়াল ও ছাদের ভিতরের অংশ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বর্ষাকালে ছাদের জল চুঁইয়ে-চুঁইয়ে ভিতরে ঢোকে। এহেন ভগ্নপ্রায় বাড়িতে বসে কাজ করেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার স্বাস্থ্য দফতরের সর্বোচ্চ আধিকারিক-সহ দফতরের প্রায় ১০০ জন কর্মী। পাশে নতুন করে দফতরের ভবন তৈরির জন্য এক বছর আগে প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। আজও সেই কাজ শুরু হয়নি। এই অবস্থার জন্য পূর্ত দফতরের টালবাহানাকে দায়ী করছে দফতরের কর্মী সংগঠন। পূর্ত দফতরের অবশ্য বক্তব্য, স্বাস্থ্য দফতরের ভবনটি নিমতৌড়িতে প্রস্তাবিত জেলা প্রশাসনিক ভবনের কাছে করার ভাবনা-চিন্তা চলছে এখন। জায়গা নিয়ে জেলা প্রশাসনের দ্বিমতের কারণেই নতুন ভবনের কাজ শুরু করা যায়নি।
তমলুক শহরের পুরসভা অফিসের সামনে দোতলা যে বাড়িটিতে বর্তমানে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস চলছে, সেটি আদতে পুরনো তমলুক মহকুমা হাসপাতাল। ১৮৯৭ সালে তৈরি ওই হাসপাতাল ব্রিটিশ আমলে মহারানি ভিক্টোরিয়ার ভারত শাসনের ৬০ বছর পূর্তিতে উত্সর্গ করা হয়েছিল। বাবু নীলমনি মণ্ডল ডায়মন্ড জুবিলি হাসপাতাল নাম ছিল তখন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালে তমলুক মহকুমা হাসপাতাল স্থানান্তর হয়ে আসে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে। পুরনো ওই হাসপাতাল ভবনের একটি ঘরে এখনও বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। |
তমলুকে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর।—নিজস্ব চিত্র। |
২০০২ সালের পয়লা জানুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠনের পর তমলুক মহকুমা হাসপাতালকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নতুন জেলা গঠনের পর ২০০২ সাল থেকে পুরনো মহকুমা হাসপাতাল ভবনে চালু হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মুখ্য-স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস। দোতলা ভবনের এক তলার পাঁচটি ঘরের মধ্যে একটি ঘরে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস, একটি ঘরে জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস। বাকি ঘরগুলিতে বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের বসার জায়গা রয়েছে। দোতলার ঘরেও দফতরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা বসে কাজ করেন। কিন্তু ১১৬ বছরের পুরনো ওই ভবনের অধিকাংশ দেওয়াল ও ছাদে পলেস্তারা খসে পড়েছে। বড় বড় ফাটল। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মাঝে-মধ্যে অস্থায়ী ভাবে মেরামত করা হলেও পোড়ো বাড়িটি দিন দিন আরও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
অবস্থা বুঝে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বর্তমান অফিস ভবনের পাশে নতুন চার তলা অফিস ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয় কয়েক বছর আগে। তিনতলা ভবন তৈরির জন্য ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর মোট ৩ কোটি ৯২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ওই কাজের জন্য ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় জেলা পূর্ত দফতরকে। কিন্তু নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়নি এখনও। তৃণমূল প্রভাবিত নন-গেজেটেড হেলথ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা আহ্বায়ক চন্দনকুমার বেরার অভিযোগ, “জেলা পূর্ত দফতর ওই অফিস ভবন তৈরির দ্বায়িত্ব পেয়েও সেই কাজ করেনি। এই নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে অভিযোগ জানানো হয়েছে।” দ্রুত ওই ভবনের কাজ শুরু করার জন্য (গত ৬ জানুয়ারি) তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী জেলাশাসককে চিঠিও দিয়েছেন।
জেলা পূর্ত দফতরের তমলুক ডিভিশনের নির্বাহী আধকারিক সঞ্জয় গুহ অবশ্য বলেন, “২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে জেলার উন্নয়ন বৈঠকে তত্কালীন জেলাশাসক জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস ভবন নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরিবর্তে নিমতৌড়িতে প্রস্তাবিত জেলা প্রশাসনিক সদর অফিস প্রাঙ্গণে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর নতুন ভবন তৈরির প্রক্রিয়া থমকে যায়।”
হঠাত্ জায়গা বদলের ভাবনা কেন?
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানান, এখন যে জায়গায় স্বাস্থ্য দফতরের ভবন, সেখানে যানজট হয়। তা ছাড়া জেলা প্রশাসনিক ভবনের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের অফিস হলে কাজকর্মেও সুবিধা হবে। এই কারণে নিমতৌড়িতে প্রস্তাবিত জেলা প্রশাসনিক ভবনের কাছেই নতুন স্বাস্থ্য ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সেই কাজ শুরু করার আশ্বাসও দিয়েছে জেলাশাসক।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অফিস ভবন তৈরির জন্য ৩ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৩০ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। ওই টাকায় কাজ শুরুর জন্য দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” |