সদ্য প্রসূতিদের ওয়ার্ডে একটি শয্যায় গাদাগাদি করে কোথাও তিন জন, কোথাও দু’জন মা। প্রসবের ধকলে এমনিতেই কাহিল, তার উপরে ওইটুকু জায়গায় নড়াচড়া করা প্রায় অসম্ভব। দাঁতে দাঁত চেপে জবুথবু হয়ে বসে রয়েছেন তাঁরা। মঙ্গলবার আচমকা এম আর বাঙুর হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে তাঁদের দেখেই কপাল কুঁচকে গেল কেন্দ্রের গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের (এনআরএইচএম) অধিকর্তা অনুরাধা গুপ্ত-সহ অন্য কর্তাদের।
সঙ্গে-সঙ্গে হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়ে গেল। ঠিক হল, বাঙুর হাসপাতালের চারতলাতেই সদ্যপ্রসূতি ও শিশুদের জন্য বাড়ানো হবে অন্তত ১০০টি শয্যা। তার জন্য টাকা দেবে এনআরএইচএম। |
কেন্দ্রের নতুন ‘রিপ্রোডাক্টিভ মেটারনাল নিওনেটাল চাইল্ড হেল্থ অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট হেল্থ’ প্রকল্পের ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার-কর্মীদের ওয়াকিবহাল করতে কলকাতায় এসেছে এনআরএইচএমের এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। প্রকল্পে গোটা ভারতের দেড়শোর বেশি এমন জেলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে প্রসূতি, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা যথেষ্ট উন্নত নয়। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৫টি জেলা রয়েছে। এগুলি হল কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ইতিমধ্যে ইউনিসেফের সাহায্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পরিষেবার ফাঁক খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২৪ পরগনার জেলা হাসপাতাল হল এম আর বাঙুর। এনআরএইচএমের প্রতিনিধিরা এই হাসপাতালে মা ও শিশুর পরিষেবা ঘুরে দেখতে চান। সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট ঘুরে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রসূতিদের ওয়ার্ডে ভিড়ের চাপ সামলে কী করে ভাল পরিষেবা দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিনিধিদল।
সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “একই শয্যায় গাদাগাদি করে প্রসূতিরা থাকলে শারীরিক অসুবিধার পাশাপাশি ক্রস ইনফেকশনের আশঙ্কাও থাকে। কিন্তু আমরা নিরুপায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জেলা থেকে তো বটেই, এমনকী কলকাতা থেকেও প্রচুর রোগী সর্বক্ষণ আসছে। কাউকে ফেরানো যায় না। চারতলায় কিছু শয্যা বাড়ানোর প্রস্তাব অনেক আগেই স্বাস্থ্য ভবনে দিয়ে রেখেছিলাম। খুব ভাল হল, আজ এ ব্যাপারে সরাসরি এনআরএইচএম কর্তাদের অনুমতি পাওয়া গেল।”
বাঙুর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, সাড়ে ছ’শো শয্যায় হাসপাতালে সর্বক্ষণ ভর্তি ১০০০ জন। প্রসূতিদের ওয়ার্ডে ৫৭টি শয্যায় এখন ভর্তি ১০০ জন। সমস্যা হবেই। তবে ডাক্তার ও নার্সরা তার মধ্যে আপ্রাণ ভাল পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আশা করা যায়, শয্যা বাড়লে সামলে নেওয়া যাবে।
এ দিন এনআরএইচএমের আর একটি প্রতিনিধি দল এনআরএস পরিদর্শনে যান। ওই দলের অন্যতম, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি কমিশনার হিমাংশু ভূষণ জানান, আউটডোরে যাতে কোনও রোগীকে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়, সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, ওই হাসপাতালে নার্সদের মা ও শিশুর দেখভালের প্রশিক্ষণ দিতে একটি নার্সিং অ্যাকাডেমি রয়েছে। ওই অ্যাকাডেমিকে আয়তনে আরও বাড়ানোর জন্য এনআরএইচএম অর্থসাহায্য করবে বলে জানানো হয়েছে।
|