মশাবাহিত রোগে আক্রান্তদের তথ্য জানতে শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে সবক’টি রক্তপরীক্ষা কেন্দ্র এবং হাসপাতাল-নার্সিংহোমে ঘুরবেন পুরকর্মীরা। তাঁদের (ডেটা অপারেটর) কাজ হবে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে দৈনিক তথ্য সংগ্রহ করে রেকর্ডভুক্ত করা। নতুন বছরে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া রোধে এমনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুর-প্রশাসন। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “শহরের কোনও এলাকায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে কি না, ওই সব তথ্য হাতে এলে তা জানা যাবে। এবং সেই এলাকায় মশা-দমন প্রক্রিয়াও চালানো যাবে।” অতীনবাবু জানান, গত বছর ওই দু’টি রোগের প্রকোপ থেকে শহরবাসীকে অনেকটা বাঁচানো গেলেও তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে একটা অসুবিধা রয়েই গিয়েছিল। এ বার শুরু থেকেই তথ্য সংগ্রহে জোর দিতে চায় পুরসভা। নতুন ব্যবস্থায় শহরে কোথাও কারও রক্তে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিললেই তা নথিভুক্ত করা হবে পুরসভার রেকর্ডে। খুব শীঘ্রই ওয়ার্ড-ভিত্তিক এই তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা হবে বলে পুর সূত্রের খবর।
কেন এ উদ্যোগ? অতীনবাবু জানান, মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মিললে সেই এলাকায় মশা-দমনের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। অন্যথা, ওই মশার কামড়ে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। ঠিক মতো তথ্য না এলে ক্ষতিগ্রস্ত হন এলাকাবাসী। সে সব ভেবেই এ বছর তথ্য সংগ্রহের জন্য ওয়ার্ড-পিছু এক জন করে কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও, শহরের কোন রাস্তার ধারে কোন বাড়িতে চৌবাচ্চা আছে, কোন বাড়ির ছাদে জলাধার আছে বা কোন রাস্তার উপরে পুকুর রয়েছে সব তথ্যই সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে অতীনবাবু জানান। এক পুর-স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “চলতি মাসেই এই তথ্য সংবলিত নথি পুরসভার হাতে আসবে। তার ভিত্তিতেই বছরের বিভিন্ন সময়ে মশা দমনে নামবেন পুরকর্মীরা।”
২০১২ সালে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহিত মশা শহরে আতঙ্ক ছড়ায়। আক্রান্তের সংখ্যাও ছিল বেশি। সে বার ওই দু’টি রোগ নিবারণে পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের ঢিলেমি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মশাবাহিত রোগ নিবারণে বছরের গোড়া থেকেই কাজ শুরুর নির্দেশ দেন তিনি। এর পরেই ২০১৩-র জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া রোধে জোরকদমে কাজ শুরু করে পুর প্রশাসন। পুর-স্বাস্থ্য দফতরের পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের দাবি, এতে অসম্ভব সাফল্য মিলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালে শহরে ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮৫২ (এলাইজা পরীক্ষায়)। মৃত্যু হয় ২ জনের। ২০১৩ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৮। কেউই মারা যাননি। একই ভাবে ২০১২-তে পুরসভার ক্লিনিকে পুর-এলাকায় বসবাসকারী ২৮৯৪৪ জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মেলে। এর মধ্যে ম্যালেরিয়ায় (ফ্যালসিফেরাম) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৭৭২। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৫৬৬। যার মধ্যে ফ্যালসিফেরামে ভুগেছেন ৬৮৪ জন।
এ বারও বছরের শুরুতেই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের কাজ শুরু করে পুরসভা। ১১ জানুয়ারি এ নিয়ে টাউন হলে এক শিবিরের আয়োজন করা হয়। সেখানে থাকতে বলা হয় সব কাউন্সিলর ও চিকিৎসকদের। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম-এর (এনভিবিডিসিপি) জয়েন্ট ডিরেক্টর পি কে শ্রীবাস্তব। যদিও শিবিরে কাউন্সিলরের উপস্থিতি ভাল না থাকায় রোগ নিবারণে ওই জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অতীনবাবু জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (হু) বলছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে মশাবাহিত রোগ দমন সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল।
পুর-স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় জানান, মশাবাহিত রোগ দমনে প্রতি বছর নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং এনভিবিডিসিপি। এ সবই গবেষণার ভিত্তিতেই। তা নিয়ে চিকিৎসকদের সচেতন করতেই ওই ধরনের শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি জানান, আগামী ১৮ জানুয়ারি উত্তম মঞ্চে ফের একটি শিবির হচ্ছে। সেখানে শহরের চিকিৎসকদের ডাকা হচ্ছে। |