দেশের জন্য অশোকস্তম্ভ আগেই ছিল। এ বার নিজের জন্য একটি প্রতীক বা এমব্লেম চায় পশ্চিমবঙ্গ।
রাজ্যের এই দাবির কথা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই সঙ্গে সলতে পাকানোর কাজও শুরু করে দিয়েছে নবান্ন। রাজ্যের নতুন প্রতীক দেখতে কেমন হবে তার প্রস্তুতি নিতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চান, পশ্চিমবঙ্গের চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ছবি উঠে আসুক তার নিজস্ব ‘এমব্লেম’-এ।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাবনার সঙ্গী হতে রাজি এ রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট জনেরাও। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মনে করেন, “রাজ্যের এই দাবি ন্যায্য এবং তা মঞ্জুর হওয়া উচিত।”
কেমন হতে পারে এই বাংলার প্রতীক? প্রবীণ সাহিত্যিকের ভাবনায়, “এ রাজ্যের কোনও প্রাণী, পাখি, বা দ্রব্য যাকে পশ্চিমবঙ্গের বলে এক ডাকে জানেন মানুষ, এমন কিছু হতে পারে। একমাত্র যে রাজ্য একই সঙ্গে হিমালয় ও সমুদ্রকে স্পর্শ করেছেপশ্চিমবঙ্গের সেই মৌলিকতার কথা মাথায় রেখেও প্রতীক হতে পারে।” চিত্রকর যোগেন চৌধুরীর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের অতীত আর গর্ব মিশিয়ে তৈরি হোক প্রতীক। যেমন, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।” আর এক চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নর পরামর্শ, “বিশ্বের দরবারে পশ্চিমবঙ্গও তার নিজস্ব পরিচয়ে চিহ্নিত হোক।”
ভারতের প্রতীক অশোকস্তম্ভ গ্রহণ করা হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। তার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তার নিজস্ব প্রতীক গ্রহণ করেছে। যেমন ওড়িশার প্রতীক কোনারকের ঘোড়া। বিহারের বোধিবৃক্ষ। কেরলের জোড়া হাতি। নিজস্ব প্রতীকে পরিচিত সুপ্রিম কোর্ট, সিবিআই-সহ একাধিক সরকারি সংস্থাও। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্য। তারা এখনও ভারতের প্রতীকেই পরিচিত।
প্রশাসনের দাবি, নিজস্ব প্রতীক পেতে এ রাজ্যের আগের কোনও সরকার সক্রিয় ভাবে উদ্যোগী হয়নি। এখন সেটাই করা হচ্ছে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, প্রতীক রাখার নিয়ম কী, কোন সংস্থা বা ব্যক্তি এই সরকারি প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে, অথবা অপব্যবহার করলে কী শাস্তি হতে পারে তার যাবতীয় তথ্য-সহ কেন্দ্রীয় আইন রয়েছে। কোনও রাজ্যের নিজস্ব প্রতীক রাখতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি লাগে। দিল্লির কাছে সেটাই চাওয়া হয়েছে। অনুমতি এলে সরকার নিজস্ব প্রতীক চূড়ান্ত করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেবে কেন্দ্রের কাছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে শুভাপ্রসন্ন বলেছেন, “নতুন সরকার গঠনের ছ’মাসের মধ্যে যে ভাবে রাজ্যের নাম ‘পশ্চিমবাংলা’ হয়েছে, এটাও তেমনই করে ফেলবেন মুখ্যমন্ত্রী।” তাঁর মতে, জার্মানিতে যেমন প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব প্রতীকে সেই রাজ্যের প্রকৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের নানা রূপও উঠে আসতে পারে তার প্রতীকে। যোগেনবাবুর একান্ত ব্যক্তিগত মত হলো, “ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বা হাওড়া ব্রিজের মতো যে সব স্থাপত্য আজও ব্রিটিশ ঐতিহ্য বহন করে চলেছে, রাজ্যের নিজস্ব প্রতীকে তার অস্তিত্ব না থাকাই ভাল।” |