কুকুর, ও ষাঁড়ের দাপাদাপিতে প্রাণ অতিষ্ঠ কালনাবাসীর।
কখনও গাড়ির সামনে কুকুর এসে ঘটছে দুর্ঘটনা। কখনও রাতের অন্ধকারে কুকুরের তাড়া খেয়ে পড়িমড়ি করে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন কেউ। কখনও ষাঁড়ের গুঁতোয় মাটি ধরতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কালনা শহরের তেঁতুলতলা মোড়, পুরনো বাসস্ট্যান্ড, কলেজ বাজার, ব্যাঙ্ক বাজার, চক বাজার, নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির এলাকায় অলি গলিতে সকাল থেকেই ঘুরে বেরায় কুকুর। অন্ধকার নামলে এই উপদ্রব আরও বাড়ে। যদি কোনও পাড়ায় কোনও অনুষ্ঠান থাকে তাহলে তো কথাই নেই! কুকুরদের দাপাদাপিতে নিমন্ত্রিতরাই আতঙ্কে ভোগেন। |
রাস্তা জুড়ে ঘুরছে কুকুরেরা। —নিজস্ব চিত্র। |
কালনা শহরের বাসিন্দা জীবন হালদার বলেন, “কয়েক সপ্তাহ আগে একটি পাগলা কুকুরের কামড়ে এলাকার দশ জন জখম হয়েছিলেন। তাঁদের প্রত্যেককে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে টীকা নিতে হয়েছিল।” স্থানীয় বড় মিত্র পাড়ার লক্ষণ পণ্ডিত, মহাপ্রভু পাড়ার বলাই গোস্বামী, নবকুমার চৌধুরীরা বলেন, “একটু রাত বাড়ার পরেই শহর জুড়ে শুরু হয় কুকুরের দাপাদাপি। শীত কালে এরা রাস্তার মধ্যে শুয়ে থাকার জন্য অনেক সময় বোঝাও যায় না।” তাঁরা জানান, ১০৮ শিব মন্দির চত্বর-সহ বহু জায়গাতেই রাত্রিবেলা সাইকেল, মোটর বাইক, ভ্যান দেখলে দল বেঁধে ছুটে আসে কুকুর। চাকার সামনে কুকুর এসে যাওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
শুধু কুকুর নয়, ষাঁড় ও গরু নিয়েও একই সমস্যা কালনায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চকবাজার, মহকুমা হাসপাতাল চত্বর, কলেজ মোড়ের মতো এলাকায় রাস্তায় বেরোলেই ষাঁড় ও গরুর দেখা মিলবে। এক সপ্তাহ আগে ষাঁড়ের গুতোয় জখম বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ চাকি বলেন, “আমি যখন বাজার থেকে ফিরছিলাম তখন আমাকে গুতিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এখনও আমার বুকে ও পাঁজরে ব্যাথা রয়েছে।” তিনি আরও জানান, ষাঁড় ও গরু প্রায়ই মোটর বাইক উল্টে দেয়। দোকানে ঢুকে মালপত্র নষ্ট করে। শুধু সাধারণ বাসিন্দাই নয়, গরুর আক্রমণ থেকে রেহাই মেলেনি কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডলের। তিনি বলেন, “দিন দশেক আগে স্কুটি নিয়ে হাসপাতালে আসছিলাম। হঠাৎ করেই স্কুটির সামনে একটি গরু চলে আসে। আমি রাস্তায় ছিটকে পড়ি। ভাগ্যিস সেই সময় রাস্তায় কোনও গাড়ি ছিল না।” তিনি আরও জানান, হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সমস্যা মেটানোর জন্য, রোগী কল্যাণ সমিতির পরবর্তী বৈঠকে রাস্তার কুকুরদের নিবীর্জকরণের প্রস্তাব দেওয়া হবে জানান তিনি। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষ মণ্ডল বলেন, “এই সমস্যা মেটাতে পুরসভাকেই উদ্যোগ নিতে হবে।”
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে কালনা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, “কুকুর নিবীর্জকরণ বিষয়ে আইনের কড়াকড়ি রয়েছে। তবে এই বিষয়ে লিখিত ভাবে জানালে কাউন্সিলারদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে বন দফতরের পরামর্শও নেওয়া যেতে পারে।” |