বাম আমলে হাওড়ার নিকাশি সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ের অভাব নিয়ে অভিযোগ ছিল দীর্ঘ দিনের। ক্ষমতায় এসেই হাওড়ার তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড তাই নিকাশির সঙ্গে যুক্ত তিনটি সরকারি সংস্থাকে নিয়ে একটি ১০ কোটি টাকার নিকাশি উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি
করেছে এবং যে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। বর্ষার আগেই ওই কাজ শেষ করে ফেলার জন্য কোমর বেঁধে নামছে পুরসভা।
প্রতি বর্ষায় হাওড়ার নিচু এলাকাগুলিতে জল জমা নিয়ে সমস্যা দীর্ঘ দিনের। অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে শহরের নিকাশি ব্যবস্থার কোনও রকম সংস্কার না করায় এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় ফি বছরই জমা জলের আতঙ্ক থেকে রেহাই পান না শহরের মানুষ। হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ায় নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে পুরসভা ছাড়াও সরাসরি ও আংশিক ভাবে যুক্ত রয়েছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডিএ, কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি বা কেএমডব্লিউএসএ এবং হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা এইচআইটি। কারণ উত্তর হাওড়ার নিকাশি
ব্যবস্থা ৭টি পাম্পিং স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করে কেএমডব্লিউএসএ, মধ্য হাওড়া ও বেলগাছিয়া এলাকার নিকাশি ২টি পাম্পিং স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করে কেএমডিএ। হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি
যুক্ত না হলেও এইচআইটি বহু ক্ষেত্রেই হাওড়ার ভূগর্ভস্থ নিকাশি পাইপলাইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া শহরে ভূগর্ভস্থ নর্দমা রয়েছে ৬৬.৭ কিলোমিটার, খোলা পাকা নর্দমা রয়েছে ৪০০ কিলোমিটার এবং কাঁচা নদর্মা রয়েছে ১০০ কিলোমিটার। এই সমস্ত নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা, পলি তোলা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা পুরসভার কাজ। কিন্তু অভিযোগ হল, দীর্ঘ দিন ধরে নিয়মিত পলি না তোলায় ভূগর্ভস্থ ও খোলা নর্দমার ৬০ শতাংশ বুজে গিয়েছে। ফলে নর্দমাগুলির জলধারণ ক্ষমতাও কমে গিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই তাই নর্দমা উপচে পাঁক জলে ভাসে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। উত্তর ও মধ্য হাওড়ায় কম করে ২০টি ওয়ার্ড জমা জলের রের্কড করে প্রতি বর্ষায়।
কিন্তু জমা জল বার করে দেওয়ার জন্য কেএমডব্লিউএসএ এবং কেএমডিএ-র ৯টি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে, তা হলে শহরে জল জমে কেন?
পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “ওই দু’টি সংস্থার অধিকাংশ পাম্প হাউসে পাম্প খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কোনও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এমনকী, পুরনো পাম্পগুলির কর্মক্ষমতাও বাড়ানো হয়নি।” ওই ইঞ্জিনিয়ারের অভিযোগ, বেলগাছিয়ার নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কেএমডিএ বেলগাছিয়া ভাগাড়ের কাছে যে পাম্প হাউস করেছে, সেটির নকশাতেও ভুল থাকার জন্য ওই এলাকার নিকাশি জল বেরোতে পারছে না। ফলে অবস্থা সে তিমিরেই রয়েছে। হাওড়ায় নিকাশি সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠক করেন হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী। পরে মেয়র বলেন, “রাজ্য সরকার আগেই হাওড়ার উন্নয়নের জন্য ১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। মন্ত্রীর কাছে আমরা অবিলম্বে নিকাশির কাজ শুরু করার জন্য ১০ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছিলাম। পুরমন্ত্রী আমাদের কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য নিকাশির সঙ্গে যুক্ত সব দফতরগুলিকে নিয়ে আমরা খুব শীঘ্রই বৈঠকে বসব।” |