ভিন্ রাজ্যে পাচার হয়ে যাওয়া নাবালিকা দুই বোনকে উদ্ধার করে আনল হুগলির বলাগড় থানার পুলিশ।
এক মাস আগে বাড়ি থেকে স্কুলে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় তারা। তদন্তে নেমে ফোনের টাওয়ার ধরে বিহারের রক্সৌল থেকে সোমবার রাতে তাদের উদ্ধার করে আনা হয়। মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে দু’জনকে বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের দাবি, ভাল কাজের লোভ দেখিয়েই তাদের ওই রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে সেখানে তাদের উপরে কোনও অত্যাচার হয়নি বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি। হুগলির ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) দেবশ্রী সান্যাল বলেন, “যে যুবকের মাধ্যমে তাদের ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার খোঁজ চলছে। ঠিক কোথায় ওই দু’জনকে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল পাচারকারীদের, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আর কারা ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত, তা-ও দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, মেয়ে দু’টির বাড়ি বলাগড়ের সিজাকামালপুরে। একজন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অন্য জন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। গত ১৫ ডিসেম্বর তারা স্কুলে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরোয়। কিন্তু দেরি হয়ে যাওয়ায় আর স্কুলে ঢোকেনি। তার বদলে ত্রিবেণীর একটি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখে। কিশোরীদের দাবি, প্রেক্ষাগৃহেই তাদের সঙ্গে ওই এলাকার বাসিন্দা মঙ্গল দাসের পরিচয় হয়। প্রথম সাক্ষাতেই তাদের ভাল কাজ দেওয়ার টোপ দেয় ওই যুবক। তার কথাবার্তায় ওই কিশোরীদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি। এর পরে সিনেমা শেষ হলে দুই বোনকে নিয়ে ওই যুবক ব্যান্ডেলে যায়। সেখানে একটি বাড়িতে রাত কাটিয়ে পরের দিন ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে ট্রেনে চাপিয়ে দু’জনকে সোজা রক্সৌলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার পূর্ব চম্পারণ এলাকায় একটি বাড়িতে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল মেয়ে দু’টিকে। তাদের জানানো হয়, নাচ-গান করে ভাল উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে, দুই মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে ১৫ তারিখেই বলাগড় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁদের বাড়ির লোকজন। দিন কয়েক আগে ছোট মেয়েটি কোনও ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাবাকে ফোন করে। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলাগড় থানার ওসি তাপস চট্টোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানান। ফোনের সূত্র ধরেই কিশোরীদের অবস্থান জানা যায়। এর পরেই পুলিশ অফিসাররা রক্সৌলে রওনা দেন। স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে ওই বাড়িতে হানা দিয়ে উদ্ধার করা হয় দুই বোনকে। তবে, আর কাউকে পাওয়া যায়নি। পুলিশি হানার বিষয়টি টের পেয়ে পাচারকারীরা গা-ঢাকা দেয় বলে তদন্তকারীদের দাবি। পুলিশের কাছে কিশোরীরা জানায়, ভিন্ দেশে তাদের বিক্রি করা হবে বলে ওই বাড়িতে আনাগোনা করা লোকজন জানিয়েছিল। উদ্ধার হওয়া দুই বোনকে মঙ্গলবার চুঁচুড়া আদালতে তোলা হয়। আদালতের নির্দেশে এ দিনই তাদের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই দুই কিশোরীর বাড়ির অবস্থা যথেষ্ট অসচ্ছ্বল। বাবা বাড়ি বাড়ি ফুলগাছ বিক্রি করে সংসার চালান। তিনি বলেন, “পুলিশের তত্পরতায় মেয়েদের খুঁজে পেলাম। না হলে কী হত কে জানে!” |