ট্রেনে-বাসে কিংবা চলার পথে প্রায়ই চোখে পড়ে ঋণ দেওয়ার বিজ্ঞাপন। কোথাও পাঁচ মিনিটে, কোথাও বা নির্দিষ্ট কাগজপত্র ছাড়াই ঋণ দিতে চায় বিভিন্ন সংস্থা। পুলিশ বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গরফা থানা এলাকার ঝিল রোডের বাসিন্দা সুব্রত রায়-ও তাঁদের এক জন। যদিও এ ক্ষেত্রে প্রতারক গ্রেফতার হওয়ায় আপাতত কিছুটা স্বস্তি মিলেছে তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত আশিস চক্রবর্তী ওরফে বাপি বছর দেড়েক ধরে এই চক্রে জড়িত।
কী ঘটেছিল সুব্রতবাবুর সঙ্গে? পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি ঋণ দেওয়ার একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে সুব্রতবাবুর। তাতে লেখা ছিল, ঋণ নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্রই যথেষ্ট। তা দেখার পরে পেশায় শিক্ষক সুব্রতবাবু বাড়ি মেরামত করার জন্য ৫ লক্ষ টাকা চেয়ে ওই সংস্থায় ফোন করেন। দিন কয়েকের মধ্যেই বাপি নামে এক ব্যক্তি সংস্থার এজেন্ট পরিচয় দিয়ে সুব্রতবাবুর বাড়িতে হাজির হয়। ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে দু’পক্ষের চুক্তি সই করে ফিরে যায় সে। জানিয়েছিল, দিন সাতেকের মধ্যেই ঋণ পাইয়ে দেবে। ঋণ পাওয়ার আশায় বাড়ি মেরামতি নিয়ে রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছিলেন সুব্রতবাবু।
এর দিন তিনেক পরে হঠাৎই ফের সুব্রতবাবুর বাড়িতে আসে বাপি। ঢিপ করে প্রণাম ঠুকে সে জানায়, ঋণের আবেদন পাশ হয়ে গিয়েছে। ঋণের পাঁচ শতাংশ অর্থাৎ নগদ ২৫ হাজার টাকা ও চারটি সই করা খালি চেক প্রয়োজন। ঋণের আশায় সে দিনই ব্যাঙ্ক থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা এবং চারটি চেক সুব্রতবাবু বাপিকে দেন। ঠিক ছিল, এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঋণের চেক মিলবে। কথা মতো পরের দিনই বাপি এসে সুব্রতবাবুকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাঁচ লক্ষ টাকার চেক দিয়ে যায়। দিন দুয়েক পরে ওই ব্যাঙ্কে চেক নিয়ে যেতেই প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন সুব্রতবাবু। এক পুলিশকর্তা বলেন, “জালিয়াতির বিষয়টা ব্যাঙ্ককর্মীরাই সুব্রতবাবুকে বুঝিয়ে দেন।”
এর পরেই ২৫ ডিসেম্বর গরফা থানায় অভিযোগ জানান তিনি। সুব্রতবাবুর কথা শুনে অভিযুক্তের স্কেচও আঁকানো হয়। বাপিকে ধরতে ফাঁদ পাতে পুলিশ। তার নম্বর জোগাড় করে ঋণ নেওয়ার কথা জানানো হয়। প্রথম কয়েক দিন ফোন বন্ধ থাকার পরে এক মহিলা ফোন ধরেন। তাঁকে ঋণ নেওয়ার কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ঢাকুরিয়া থানা এলাকার একটি বাড়ির ঠিকানা দেওয়া হয়। ৩০ ডিসেম্বর বাপি মোটরবাইক নিয়ে সেখানে হাজির হলে তাঁকে পাকড়াও করেন তদন্তকারীরা। জেরায় জানা যায়, তার আসল নাম আশিস চক্রবর্তী। বাড়ি হাওড়ার রামরাজাতলায়।
বাপিকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, উত্তর কলকাতার একটি বাড়ির সিঁড়ির তলার ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস খুলে বসেছিল সে। ওই মহিলার কণ্ঠস্বরটিও তার। ঋণের টোপ দিয়েই সে সই করা ফাঁকা চেক হাতিয়ে নেয়। তার পরে সেই চেকে নাম লিখে অন্য ঋণগ্রহীতাকে চালান করে। সুব্রতবাবুকে দেওয়া চেকটি পূর্ব মেদিনীপুরের এক বাসিন্দার বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই চক্রে আর কারা জড়িত, তা-ও খোঁজ করছে পুলিশ। |