ব্যবসায়ীর বাড়িতে লুঠপাটের পরে দু’সপ্তাহ পার। কিন্তু এখনও কোনও কিনারা করে উঠতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ বরাকরের ব্যবসায়ী মহল থেকে বাসিন্দারা।
গত ৩১ ডিসেম্বর ভোররাতে বরাকরের নিমাকানালি এলাকায় অরবিন্দ নেহারিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে লুঠপাট চালিয়েছিল জনা পনেরোর দুষ্কৃতী দল। কিন্তু প্রায় ১৫ দিন কেটে গেলেও এখনও এই লুঠপাটের ঘটনায় ধরা পড়েনি কেউ। যদিও পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীরা ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছিল। তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। এ বিষয়ে ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ কমিশনারেট। বরাকরে ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
কিন্তু নজরদারি বাড়লেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করা গেল না কেন? পুলিশের বক্তব্য, বরাকর সীমানা এলাকা হওয়ায় দুষ্কৃতীরা খুব সহজে নানা অপরাধ করে ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে যায়। ফলে তাদের হদিস পেতে সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বুঝতে পেরেছি দুষ্কৃতী দলটি ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছিল। সেখানকার কোন এলাকা থেকে এসেছিল, তা-ও অনুমান করা গিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সে সব গোপন রাখা হচ্ছে।”
পুলিশের একাংশের অনুমান, ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে লুঠপাটের ঘটনায় পরিচিত কারও যোগ রয়েছে। কারণ, লুঠের আগে দুষ্কৃতীদের মধ্যে কেউ ওই ব্যবসায়ীর ডাকনাম ধরে ডেকেছিল বলে পুলিশ জেনেছে। পুলিশের একাংশ জানায়, তারা একটি সূত্রে জেনেছে, ওই দুষ্কৃতী দলের দু’জন এক সময়ে বরাকর এলাকাতেই থাকত। তারা সর্ম্পকে মামা-ভাগ্নে। সাধারণত বরাকর এলাকায় কোনও দুষ্কর্মের আগে তারা কয়েক দিন বরাকরে থাকে। পরে কাজ সেরে সুযোগ বুঝে এলাকা ছাড়ে। পুলিশ নিশ্চিত, মামা-ভাগ্নে-সহ দুষ্কৃতী দলটি বর্তমানে ঝাড়খণ্ডেই লুকিয়ে রয়েছে। বছরখানেক আগে বরাকরে একটি সোনার দোকানে ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছিল। আজও সেই ঘটনার কিনারা হয়নি। পুলিশের দাবি, ওই দু’টি লুঠপাটের ঘটনাতেও এই দুষ্কৃতী দলের যোগ রয়েছে।
বারবার একই ঘটনা ঘটার ফলে সীমানা এলাকায় লুঠতরাজ বন্ধের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট। এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ইতিমধ্যে বরাকরের সীমানা এলাকাকে আরও কড়া নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। পুলিশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বরাকরের জনবহুল ও সীমানা এলাকায় বসানো হবে সিসিটিভি। বরাকর পুলিশ ফাঁড়িতে তৈরি করা হবে কন্ট্রোল রুম। এ সবের তৈরির জন্য জেলার বণিক সংগঠনগুলির কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছে পুলিশ।
যদিও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশের কথা শুনে তাঁরা দোকান বা ঘরের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। কিন্তু তাতে বিশেষ ফল মেলেনি। কারণ, দুষ্কৃতীরা লুঠপাঠ চালানোর আগে ওই ক্যামেরার তার ছিঁড়ে দিচ্ছে। বরাকর বণিকসভার সভাপতি গিরিধারীলাল অগ্রবাল বলেন, “আমরা পুলিশের সঙ্গে সব রকমের সহযোগিতা করব।” |