কয়েদিদের বাঁশির সুর, রবীন্দ্রসঙ্গীতে উদ্বোধন হল দুর্গাপুরের মুক্ত সংশোধনাগারের। রাজ্যে এটি এ ধরনের দ্বিতীয় সংশোধনাগার। মঙ্গলবার উদ্বোধন করার পরে রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি বলেন, ““বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ২৬০০ যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত কয়েদি রয়েছেন। দীর্ঘদিন সাজা কাটিয়ে ফেলা যত বেশি সম্ভব কয়েদিকে মুক্ত সংশোধনাগারের সুযোগ দিতে চাই আমরা।” |
কয়েদিদের মাঝে কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি (সবুজ পাঞ্জাবি)। |
১৯৮৭ সালে রাজ্যে প্রথম এমন সংশোধনাগার গড়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। সেখানে এখন প্রায় একশো জন কয়েদি রয়েছেন। তাঁরা রাতে সংশোধনাগারে থাকেন। সকালে কাজে বেরিয়ে পড়েন। রোজগারের জন্য কেউ খেত, কেউ বাগানে কাজ করেন, কেউ বা আবার দোকান চালান। ভালো আচরণের ভিত্তিতে ১৫ জন কয়েদি সপরিবারে থাকার সুযোগ পান সেখানে। কিন্তু লালগোলা মূলত কৃষি অধ্যুষিত হওয়ায় রোজগারের হার কম। তুলনায় দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে আয়ের সুযোগও বেশি। সে জন্যই দুর্গাপুরে আরও একটি এমন সংশোধনাগার গড়া হল বলে জানান আইজি (কারা) রণবীর কুমার।
এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন সংশোধানাগারের কয়েদি মন্টু মাহাতো। পরে বাঁশির সুরে ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ শোনান বোলপুরের গোপাল মুর্মু। সে কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “এখানে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ গুণে পারদশর্ীর্। আমার অনুরোধ, সবাই ওঁদের পাশে থাকুন, কাজের সুযোগ দিন।” তিনি জানান, আলিপুরে প্রেসিডেন্সি জেলে সোমবার থেকে মহিলা কয়েদিদের জন্য শুরু হয়েছে তিন মাসের ‘বিউটিশিয়ান কোর্স’। এ দিন দুর্গাপুরে ভবানীপুরের ছবিনাথ শঙ্কর ও পুরুলিয়ার থুলু রাজভরের হাতে দুটি রিকশা ভ্যান তুলে দেয় একটি সংস্থা। ওই কয়েদিরা জানান, চলন্ত ভ্যানে দোকান দেবেন তাঁরা। এ ছাড়াও এগিয়ে এসেছে আর একটি সংগঠন। কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তারা একটি করে সাইকেল দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ ছাড়াও কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় কয়েদিদের নিয়ে গিয়ে দরবারও করছে তারা। |
বাঁশি বাজাচ্ছেন গোপাল মুর্মু। |
দুর্গাপুরের এই সংশোধনাগারে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই অন্তত ১২ বছর কারাবাস করে ফেলেছেন। ১৪ বছর সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে এমন অনেকে রয়েছেন। এক জন ২০ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন জেলে। কারামন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টের আইন অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজা মানে সারা জীবনের সাজা। তবে রাজ্যে ‘বন্দি মুক্তি কমিটি’ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা সাজা ভোগ করছেন, তাঁদের আচরণ দেখে সেই কমিটি ধাপে ধাপে তাঁদের ছাড়া পাওয়ার ব্যবস্থা করছে। মন্ত্রী বলেন, “লালগোলায় ভাল আচরণ দেখে ১৯ জনকে দুর্গাপুরে আনা হয়েছে। কাজেই, তাঁরা যদি এই ধারা বজায় রাখতে পারেন তাহলে ছাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।” তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে দুর্গাপুরে ৩০ জন কয়েদি রাখার পরিকাঠামো গড়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ৩৫ জনকে রাখা যেতে পারে। কারামন্ত্রী বলেন, “এর পরে উত্তরবঙ্গে এই ধরনের সংশোধনাগার গড়ার পরিকল্পনা চলছে। তবে এখনও জায়গা নির্দিষ্ট হয়নি।”
কারামন্ত্রী এ দিন জানান, প্রতিবেশী দেশ থেকে অনুপ্রবেশের জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার বন্দি রয়েছেন এ রাজ্যের জেলে, যাঁদের সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের ফেরত পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হচ্ছে। |
মঙ্গলবার ছবিগুলি তুলেছেন বিকাশ মশান। |