সাহেবখালি হাসপাতাল
চিকিৎসক পাওয়ার আশ্বাস, অথচ অস্তিত্বই বিপন্ন হাসপাতালের
হাসপাতালে তিন মাস ধরে কোনও চিকিৎসক নেই। গ্রামবাসীদের এ হেন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে হাসপাতালের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি হাসপাতাল নিয়ে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বসিরহাট মহকুমার ১০টি ব্লকের অন্যতম হিঙ্গলগঞ্জে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় কালিন্দী নদীর প্রায় গা ঘেঁষে সাহেবখালি হাসপাতাল। নদীর ওপারে বাংলাদেশ। বেশ কয়েক হাজার মানুষের চিকিৎসার একমাত্র উপায় হলেও হাসপাতালে তিন মাস ধরে কোনও চিকিৎসক নেই। আয়লার তাণ্ডবের পর কখনও বেহাল রাস্তা, কখনও পানীয় জল ও পরিকাঠামোর সমস্যার জন্য হাসপাতালে থাকা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা অন্যত্র চলে যান। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এলেও তা হাসপাতালে রোগীদের ভিড়ের পক্ষে একেবারেই অপ্রতুল ছিল। হাসপাতালের এমন অবস্থা নিয়ে বার বার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু সুরাহা তো হয়নি উল্টে তিন মাস ধরে তাঁরা কোনও চিকিৎসকের দেখা পাননি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, হাসপাতাল লাগোয়া সাহেবখালি ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ যখন এখানে বাস করতে পারছেন, তখন কেন পাকা হাসপাতালের ঘরে চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকতে পারবেন না? শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের অনেক অনুরোধে স্থানীয় একজন স্বাস্থ্যকর্মী, যিনি অন্য হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত তিনি সপ্তাহে এক-দু’দিন করে আসা শুরু করেন। কিন্তু গোল বাধে সেখানেও। রোগীদের দেওয়া হাসপাতালের কাগজে সাহেবখালি হাসপাতালের পরিবর্তে অন্য হাসপাতালের নাম লেখা থাকায় তা নিয়ে তাঁরা আপত্তি জানান। এর পরে ওই স্বাস্থ্যকর্মীও আসা বন্ধ করে দেন। তার পর থেকে হাসপাতাল তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ তাঁরা চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হলেও হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মী সকলেই নিয়মিত বেতন পেয়ে যাচ্ছেন।
তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে হাসপাতাল।—নিজস্ব চিত্র।
গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১১ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্বাস্থ্য দফতরের এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সাহেবখালি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। গ্রামবাসীদের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা শুনে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন চলতি মাসের মধ্যেই যাতে হাসপাতালটি ফের চালু করা যায় সে বিষয়টি দেখবেন। এমনকী হাসপাতালের গেটে তালা ঝোলানোর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। আর এখানেই দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। এই এলাকায় নদীবাঁধের সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই কাজে কালিন্দী নদীর প্রায় গা ঘেঁষে থাকা সাহেবখালি হাসপাতাল ভবনটি ভাঙা পড়বে। সে ক্ষেত্রে তা অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত পাণ্ডে বলেন, “স্বাস্থ্য ভবন থেকে প্রতিনিধি দলের কাছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবের কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া নদীবাঁধ সংস্কারের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তাতে সাহেবখালি হাসপাতাল বাঁধের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। সে জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত লাগোয়া জমিতে হাসপাতাল করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আপাতত যাতে সপ্তাহে দু’-একদিন একজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সাহেবখালিতে যান তার চেষ্টা হচ্ছে।”
১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রায় ৬০ লক্ষ টাকায় তৈরি হয়েছিল সাহেবখালি হাসপাতাল। জরুরি ও বহির্বিভাগ ছাড়াও রয়েছে অপারেশন থিয়েটার, প্রসূতি বিভাগ, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, জেনারেটর ইত্যাদি। দীর্ঘ দিন কোনও সংস্কার না হওয়ায় ভবনের অবস্থা সঙ্গীন। ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ে। হাসপাতালের চারধারে কোনও প্রচীন না থাকায় সন্ধের পরে হাসপাতাল চত্বর সমাজবিরোধীদের দখলে চলে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা নীতিশ মণ্ডল, কৃষ্ণপদ মণ্ডল, সাহেব মণ্ডল বলেন, “স্থানীয় চারটি গ্রাম-সহ দুলদুলি, চাঁড়ালখালি, পাটঘরা-সহ সুন্দরবন লাগোয়া ১৫-২০টি গ্রামের ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের ভরসা এই হাসপাতাল। হাসপাতাল তালাবন্ধ থাকার কারণে সাপে কাটা, ডায়েরিয়া, আন্ত্রিক যাই হোক না কেন নদী পেরিয়ে ছুটতে হয় ৫০ কিলোমিটার দূরের বসিরহাট জেলা হাসপাতালে। দূরত্বের কারণে পথে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।” তাঁদের বক্তব্য, বার বার সমস্যার কথা জানানোর পরে স্বাস্থ্য দফতরের লোকজন এসে যখন চিকিৎসক আসার, পরিষেবা পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিলেন, তখন বাঁধ তৈরির কারণে হাসপাতালে এখানে থাকবে কি না সেই প্রশ্নই উঠে গিয়েছে। এখান থেকে হাসপাতাল উঠে গেলে এখানকার মানুষ কী ভাবে চিকিৎসা পাবেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.