নাবি ধসা রোগে বিপর্যস্ত রাজ্যের তিনটি জেলার আলু চাষিরা। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার এবং দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় নাবি ধসা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রীতিমতো কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে নবান্নে। কৃষি মন্ত্রী মলয় ঘটক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার বিকেলে দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে দফতরের সচিব সুব্রত বিশ্বাস ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের তরফে সমস্ত চেষ্টা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার কারণে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। রোগ প্রতিরোধে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
রাজ্যে চলতি বছরে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বার তিন লক্ষ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। চলতি মরসুমে জলদি জাতের আলু কম চাষ হয়েছে। কিন্তু পরে অনেকেই আলু চাষ করেছেন। তাই লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি চাষ হয়েছে। কোচবিহার, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। কৃষি দফতরের কর্তাদের মতে,১৫ হাজার হেক্টর জমিতে নাবি ধসার আক্রমণ হয়েছে। এক বহুজাতিক কোম্পানির চুক্তি চাষ এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
কোচবিহার জেলায় আলু খেতে ধসা রোগ মারাত্মক ছড়িয়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, জেলায় প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর এলাকায় আলু চাষ হয়। তার মধ্যে ৬ হাজার হেক্টর এলাকায় ধসার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সিংহভাগ এলাকা কোচবিহার সদর ও তুফানগঞ্জ মহকুমার আওতাধীন। আলু খেতে ধসায় আক্রান্ত হয়েছে বলে কোচবিহার ২ ব্লকের ঢাংঢিংগুড়ি, বড় রাংরস, বাউদিয়ারকুঠি, মাষানকুড়া, পুন্ডিবাড়ি এলাকায় ধসার সংক্রমণ বেশি। তুফানগঞ্জের ধলপল, শিকদারেরখাতা, নাককাটিগছের বিস্তীর্ণ এলাকার আলু খেতে ধসার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ঘন কুয়াশা ও মন্দ আবহাওয়ার জন্য ধসা সংক্রমণ শুরু হয়। টানা কয়েকদিন আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়ায় সংক্রমণ এলাকা বেড়ে যায়। কোচবিহারের মুখ্য কৃষি আধিকারিক বিধান চক্রবর্তী এ দিন বলেন, “দু’দিন থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় নতুন কোনও এলাকার জমিতে এখন সংক্রমণের খবর নেই। এলাকায় ছত্রাকনাশক দেওয়া হচ্ছে ফলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমানো যাবে বলে আমরা আশা করছি।”
প্রসঙ্গত, ধসা রোগ ছড়িয়ে পড়ায় কৃষি দফতর শনিবার ও রবিবার প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিয়ে প্রচারের জন্য কৃষি দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেও ধসা মোকাবিলায় চাষিদের সচেতনতা বাড়ান ও প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করা নিয়ে প্রচার হচ্ছে। পাটছড়া গ্রামের সুবেশ দাস বলেন, “চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। তার মধ্যে দুই বিঘাতে ধসার সংক্রমণ হয়েছে। কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে প্রতিষেধক দিয়ে ক্ষতি সামলানর চেষ্টা করছি।” |