পৌষ-পার্বণ মানে সুগন্ধের উৎসব। নতুন চাল,পয়লা গুড়, ঘন ক্ষীরের সুবাসে ম-ম গেরস্তের ঘর। মেয়েদের আঙুলের চাপে কত না রকমারি নকশা উঠত পিঠের গায়ে।
আর আজ? কোথায় সেই পিঠে গড়ার এলানো দুপুর, কোথায়ই বা চাল কোটার ঢেঁকি? গ্রাম-মফসস্লের অনেক গেরস্তালিতে পিঠে-পাটিসাপ্টা ট্র্যাডিশন বজায় রয়েছে বটে। কিন্তু বহু বাড়িতেই পিঠে এখন আসে প্যাকেটে, প্লাস্টিকের ব্যাগে দুলে-দুলে। বহু দোকানের শো-কেসে রসগোল্লা, সন্দেশ, চমচমকে পিছনে ঠেলে সামনে চলে এসেছে দুধপুলি থেকে সরা পিঠে। বাংলাদেশে তো ওয়েবসাইটেও অনলাইন পিঠে বিক্রি চলছে দেদার। |
দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি। |
বহরমপুর শহরের মোহনের মোড়ে একটি অভিজাত মিষ্টির দোকানের মালিক সঞ্জয় সাহা বলেন, “সব উপকরণ প্রস্তুত। মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হয়ে যাবে দুধপুলি, ভাজা পিঠে, পাটিসাপটা, গোকুল পিঠে, কলাই ডালের রসবড়া, আলু আর মটরসুটি দিয়ে তৈরি পুরের ভাজা পিঠে।” এতে খুশি গৃহিনীরাও। বহরমপুর শহরের খাগড়া এলাকার প্রৌঢ়া বিন্দুবাসিনী চৌধুরী বলেন, “যৌথ পরিবারে, লোকবল ছিল। এখন পিঠে কে করবে? এখন মেয়েরা হাঁড়ি হেঁশেল পছন্দও করে না।”
শিলিগুড়ির বিধান রোডের গোষ্ঠ পালের মূর্তির কাছে একাধিক বড় মিষ্টির দোকান। ঢাউস পাটিসাপটা দাম ২০ টাকা। সুভাষপল্লিতে পাটিসাপ্টার দর ১০ থেকে ১৫ টাকা। ভাপা পিঠে মিলছে অনেক মোড়েই। বাঘা যতীন পার্কের সামনে গরম পিঠে খেতে রোজই উপচে পড়ছে ভিড়। সোমবার বালুরঘাটে পিঠের বাজার ছিল জমজমাট। তাই চালের গুঁড়ো থেকে খেজুর গুড়ের দাম এক লাফে ১০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। এদিন প্রতি কেজি খেজুর গুড় ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আখের গুড় কেজি প্রতি দর ৪০-৫০ টাকা। তিলের খাজা, ভাপা পিঠে কিনতে ভিড় জমছে। কোচবিহার শহরের বড় মাপের মিষ্টির দোকানের তরফে শ্যামল ঘোষ বলেন, “অনেকেই কয়েক দিন ধরে পিঠে খুঁজছেন। বেশি বানানো হচ্ছে পাটিসাপটা।” |
সচরাচর এ দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য। |
দোকানে পিঠে বিক্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কমেছে পিঠে তৈরির সরার বিক্রিও। বালুরঘাট শহরের পথেও একাধিক সরা বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, পিঠে তৈরির সরার তেমন বিক্রি নেই। গ্রাম থেকে এসে সামান্য ক’টা সরা বিক্রি করেই সন্তুষ্ট হতে হয়েছে।
হাওড়ার জগাছা থানার পাশের একটি মিষ্টির দোকানের মালিক উত্তম সামন্ত জানান, দুধ-পুলির দাম ৭ টাকা ও পাটিসাপ্টার দাম ৮ টাকা। ছানার পায়েস ২৫০ টাকা কেজি। ডোমজুড়, সাঁকরাইলের দোকানেও পিঠের বিক্রি চলছে। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি পুরনো দোকানে গিয়ে দেখা গেল, গোকুল পিঠে, পালো পিঠে, চুষি পিঠে, মালাই-পুর ভরা ছানার পাটিসাপ্টা, মুগ ডাল ও চালগুঁড়ি দিয়ে তৈরি ভাজা পিঠে, সবই মজুত। রয়েছে মালপোয়াও। মালিক অশোককুমার নাগ জানান, দুর্গাপুরে বহু প্রবীণ মানুষের বসবাস, তাঁদের ছেলেমেয়ে বাইরে। “ক্রেতাদের কাছ থেকে পিঠে গড়ার প্রস্তাব পেয়েই গত কয়েক বছর ধরে পিঠে বানানো শুরু করেছি।” সিটি সেন্টারের দোকানে পিঠে কিনতে এসে স্কুল শিক্ষিকা শ্রাবনী দেবনাথ বললেন, “চাকরি করে পিঠে গড়ার সময় নেই। কিন্তু বাচ্চাদের তো এমন মধুর স্বাদ থেকে বঞ্চিত করতে পারি না!” |
বালুরঘাট শহরে তেমন ভিড় নেই
পিঠে তৈরির সরা কিনতে। |
পিঠে-পুলি কিনতে ভিড় জমছে
মিষ্টির দোকানেই। শিলিগুড়িতে। |
|