রাতের অন্ধকারে হোমের ঘেরাটোপ থেকে পালিয়েছেন এক আবাসিক তরুণী। ঘটনাটি পুরুলিয়ার আনন্দমঠ হোমের। শনিবার রাতে ঘরের জানলার গ্রিল ভেঙে ওই তরুণী পালিয়ে যান বলে হোম কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “ওই আবাসিকের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে, পুলিশ তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে।” হোম সূত্রের খবর, কাজল অগ্রবাল নামে ওই তরুণীকে কলকাতার সুকন্যা হোম থেকে ২০১০ সালের মার্চ মাসে আনন্দমঠ হোমে পাঠানো হয়। কলকাতার হোমেও এই আবাসিকের আচরণ এই রকমই ছিল। মূলত সে কারণেই তাঁকে পুরুলিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। আনন্দমঠ হোমের সুপার অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখানে নিয়ে আসার আড়াই বছর পরে ওই তরুণী হোম থেকে পালিয়ে যায়। পরে হোম থেকে কমবেশি এক কিলোমিটারের মধ্যে স্থানীয় বেলগুমা এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় মানুষ একা একা ঘুরতে দেখে তাঁকে ধরে রেখেছিলেন। পরে হোম কর্তৃপক্ষের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়া হয়।
অর্চনাদেবী বলেন, “শনিবার রাতে কাজল যথারীতি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিল। ঘটনাটি নজরে আসে পরের দিন। জানতে পারি, কাজলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।” খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায় ওই তরুণী হোমের দোতলায় যে ঘরে থাকতেন, সেই ঘরের জানলার গ্রিল ভেঙে পালিয়েছেন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “জানলার পাশে একটি গাছ রয়েছে। জানলা ভেঙে গাছ বেয়ে নীচে নেমে কোনও ভাবে ওই আবাসিক পালিয়ে গিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে। স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড-সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ চলছে।” অর্চনা দেবী বলেন, “আমরা মেয়েটিকে পাত্রস্থ করতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। পাত্রপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা কিছুটা এগিয়েও ছিল। কিন্তু এ ভাবে যে ও পালিয়ে যাবে, ভাবিনি।”
পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে শিমুলিয়া এলাকার এই হোমের ঘেরাটোপ থেকে আবাসিকদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। একাধিকবার এই হোমে এমন ঘটনা ঘটেছে। ফলে, হোমের নিরাপত্তার প্রশ্নটি সামনে এসে পড়েছে। হোমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে বছর দু’য়েক আগে হোমের সংস্কার-সহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেই নিরাপত্তায় যে ফাঁক-ফোকর রয়েছে, শনিবারের ঘটনা সেদিকেই আঙুল তুলেছে। হোম সূত্রের খবর, বিছানার উপরে বালিশ বা ওই জাতীয় কিছু রেখে ঢাকা দিয়ে রেখে কাজল পালিয়ে যান। তাই অন্য আবাসিকেরা সকালে উঠে প্রথমে ভেবেছিলেন, বিছানায় কাজলই শুয়ে আছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ঘরের গ্রিলের জানলা কাটার কথা অন্য কোনও আবাসিক বা হোমের নিরাপত্তারক্ষী কেন টের পেলেন না। নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এক জন আবাসিক দোতলার ঘর থেকে নেমে সাত ফুট পাঁচিল (এই পাঁচিলের উপরে আবার কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে) টপকে বাইরে বেরিয়ে গেল, উঠছে সে প্রশ্নও।
সোমবার হোমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে সেখানে যান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র, মহকুমাশাসক (সদর) সৌম্যজিৎ দেবনাথ, পুরুলিয়া মফস্সল থানার ওসি উত্তম মণ্ডল। তাঁরা তদন্তে গিয়ে শোনেন, আবাসিকদের কারও কারও কাছে মোবাইল ফোন থাকে। অমিতাদেবী বলেন, “এ দিন সকালে হোমের এক মেট্রন ওয়ার্ডে গিয়ে শোনেন কিছু আবাসিকের কাছে মোবাইল রয়েছে। কার কাছে মোবাইল আছে খোঁজ শুরু করায়, তিনি কয়েক জন আবাসিকের হাতে নিগৃহীতও হন। হোমের ভিতরে মোবাইল কী ভাবে গেল, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।” গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছেন জেলাশাসকও। |