নির্দিষ্ট দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর গোপনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে ছাত্র পরিষদ-এই অভিযোগ তুলে আগের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র বাতিল করে ফের নতুন ভাবে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার দাবি তুলল তৃণমূল ছাত্রপরিষদ। ওই দাবিতে সোমবার বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায়কে বিকাল ৪টে থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। অবশেষে এক জনের মনোনয়নপত্রে গরমিল থাকায় সেই মনোনয়নপত্রটি বাতিল করে কলেজের নির্বাচন কমিশন। তার পর ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি রাজা ঘোষ বলেন, “১০৮টি আসনের মধ্যে ৭১টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয় ছাত্রপরিষদ। আমরা ৭৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিই। ৬ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় ৬৫ আসনে ছাত্র পরিষদের মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। কিন্তু তালিকা প্রকাশ হতে দেখা যায়, ছাত্র পরিষদ ৯৯টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। আসলে তারা অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজস করে গোপনে আরও ২২-২৪টি মনোনয়পত্র জমা দিয়েছে। এ কারণে আমরা আগের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র বাতিল করে ফের নতুন ভাবে মনোনয়নপত্র জমার দাবি করছি।’’ |
অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ সোমেশবাবু বলেন, “আমি মনোনয়পত্র জমা নিই না। আমি নই, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করছে। তা ছাড়া গোপনে মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার অভিযোগও ভিত্তিহীন। তবে এক জনের মনোনয়নপত্রে নকল সই থাকায় সেটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে মনোনয়পত্র জমা নেওয়া সম্ভব নয়।” ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সরফরাজ শেখ রুবেল বলেন, “নিয়ম মেনে প্রকাশ্যেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রাতঃ বিভাগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৫টি আসনে জিতেছি বলে ওরা এখন মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্বাচন ভণ্ডুল করে দিতে চাইছে।”
আগামী ২০ জানুয়ারি জেলা জুড়ে কলেজ নির্বাচন। তার আগেই মুর্শিদাবাদ জেলার দু’টি কলেজে ছাত্র পরিষদ ও একটি কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ দখল করল।
লালবাগ সুভাষচন্দ্র সেন্টিনারি কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং ক্রীড়া সম্পাদক ছাড়াও রয়েছে ১৮টি শ্রেণি প্রতিনিধির আসন। সব মিলিয়ে ওই কলেজের মোট ২১টি আসনে ২২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার মধ্যে ২১ জনই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। সোমবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। জিয়াগঞ্জের শ্রীপৎ সিংহ কলেজে একই ভাবে ৫৪ জন শ্রেণি প্রতিনিধির মধ্যে ছাত্র পরিষদের ৪২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। ফলে ওই কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করল ছাত্র পরিষদ। ওই কলেজের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং ক্রীড়া সম্পাদক ছাড়াও ১২টি শ্রেণি প্রতিনিধির আসনে এসএফআই এবং ছাত্রপরিষদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং ক্রীড়া সম্পাদক ছাড়াও ৬টি শ্রেণি প্রতিনিধির আসনে তৃণমূল ছাত্রপরিষদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
জিয়াগঞ্জের রানি ধন্যা কুমারী কলেজের শ্রেণি প্রতিনিধির আসন সংখ্যা ২৭টি। এ ছাড়াও রয়েছে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং ক্রীড়া সম্পাদকের পদ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই কলেজের শ্রেণি প্রতিনিধির ১৯টি আসন দখল করল ছাত্রপরিষদ। তার ফলে ওই কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করল ছাত্র পরিষদ। সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং ক্রীড়া সম্পাদকের পদ ছাড়াও শ্রেণি প্রতিনিধির বাকি ৮টি আসনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।
এস এফ আই-এর জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান ও ছাত্রপরিষদের জেলার সহ-সভাপতি সুমন দাস বলেন, “তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সন্ত্রাসের কারণে লালবাগ কলেজের সব আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি।’’ অন্য দিকে এস এফ আই-এর জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান এবং মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি আসলাম আলি খান বলেন, “জিয়াগঞ্জের দু’টি কলেজে ছাত্রপরিষদের সন্ত্রাসের কারণে সব আসনে আমরা প্রার্থী দিতে পারিনি।” |